ভূমিকম্পের আতঙ্কে গোটা দেশ। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তীব্র ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এরপর নানা সময়ে দেশে অন্তত আরও ছয়বার মৃদু কম্পন অনুভূত হয়েছে। যার সবশেষটি বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাজধানী অঞ্চলে ভূমিকম্পের প্রকৃত ঝুঁকি আরও গভীর।
ভূতাত্ত্বিকদের আশঙ্কা, ঢাকার অদূরে অবস্থিত মধুপুর ফল্ট জোনে যদি ৭ মাত্রার মতো বড় ধরনের ভূমিকম্প ঘটে, তবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুবাইয়াত কবীর জানান, ঢাকা শহরের ভেতরে ৮–৯ মাত্রার ভূমিকম্প ঘটানোর মতো কোনো বড় ফল্টলাইন নেই। তবে মাত্র ৬০ কিলোমিটার দূরে মধুপুর অঞ্চলে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট সক্রিয় ফল্ট রয়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, এ ধরনের কম্পন হলে ঢাকার নতুন ভরাট করা অঞ্চলে বিরাট বিপর্যয় নেমে আসতে পারে, হতাহতের সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে এবং শহরের ভূপ্রকৃতিই বদলে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
ঢাকা শহরের অধিকাংশ পুরোনো এলাকার মাটি শত শত বছরের পুরনো, ফলে মাটির গঠনের কারণে এসব এলাকার ভূমিকম্প সহ্য ক্ষমতা বেশি। বড় ভূমিকম্পে এসব এলাকার ক্ষয়ক্ষতি তুলনামূলকভাবে কম হতে পারে। কম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে:
রমনা, পল্টন, মগবাজার, নিউমার্কেট, লালমাটিয়া, কোতোয়ালি, সবুজবাগ, খিলগাঁও, মতিঝিল, ধানমন্ডি, শের-ই-বাংলা নগর, মিরপুর, ক্যান্টনমেন্ট, পল্লবী, শাহ-আলী, লালবাগ, গেন্ডারিয়া, গুলশান ও তেজগাঁও থানা এলাকাসহ বেশ কিছু পুরোনো মাটির এলাকা।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরান ঢাকার মাটি তুলনামূলকভাবে শক্ত হলেও সেখানে বিপদ ভিন্ন প্রকৃতির। এখানকার বহু ভবন অত্যন্ত পুরোনো এবং কাঠামোগতভাবে দুর্বল, ফলে বড় কম্পনে সেগুলো ভেঙে পড়ার তীব্র ঝুঁকি রয়েছে।
বিভিন্ন গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার ভূমিকম্পে ভয়াবহ ক্ষতির ঝুঁকিতে থাকা ১৫টি এলাকা হলো সবুজবাগ, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ, কাফরুল, ইব্রাহিমপুর, কল্যাণপুর, গাবতলী, উত্তরা, সূত্রাপুর, শ্যামপুর, মানিকদী, মোহাম্মদপুর, পল্লবী, খিলগাঁও, বাড্ডা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)-এর সাধারণ সম্পাদক শরিফ জামিল বলেন, ঢাকার চারপাশের জলাভূমি রক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করা হলেও বাস্তবে সেই এলাকাগুলোই সবচেয়ে বেশি দখল ও ভরাটের শিকার হয়েছে। তার মতে, বড় ভূমিকম্প হলে সবচেয়ে ভয়াবহ ক্ষতি হবে ঠিক ওসব এলাকায়, যেখানে প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে হাজার হাজার স্থাপনা দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই সম্ভাব্য বিপর্যয়ের জন্য প্রকৃতির চেয়ে মানুষের অব্যবস্থাপনাই বেশি দায়ী হবে।


সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন