কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বিভাগে নতুন করে গতি আনতে গিয়ে প্রায় ৬০০ কর্মী ছাঁটাই করছে মার্ক জুকারবার্গের প্রতিষ্ঠান মেটা। ছাঁটাইয়ের পর মেটার সুপারইন্টেলিজেন্স ল্যাবের কর্মী সংখ্যা তিন হাজারের নিচে নেমে এসেছে। তবে এই সিদ্ধান্ত প্রভাব পড়েনি টিবিডি ল্যাবসের কর্মীদের ওপর।
বুধবার (২২ অক্টোবর) কোম্পানির মুখপাত্র কর্মকর্তা আলেকজান্ডার ওয়াং বিষয়টি সিএনবিসিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মেটার প্রধান এই এআই কর্মকর্তা এক অভ্যন্তরীণ স্মারকলিপিতে এই ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেন। চলতি বছরের জুনে ১৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের অংশ হিসেবে ওয়াংকে স্কেল এআই থেকে নিয়োগ দিয়েছিল মেটা। এবার তার তত্ত্বাবধানেই কোম্পানির ফান্ডামেন্টাল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স রিসার্চ (এফএআইআর) ইউনিট ও অন্যান্য পণ্য-সম্পর্কিত বিভাগের কর্মীদের ছাঁটাই করা হয়েছে।
তবে এই সিদ্ধান্ত টিবিডি ল্যাবসের কর্মীদের প্রভাবিত করেনি। এই ইউনিটে চলতি গ্রীষ্মে যোগ দেওয়া শীর্ষ এআই গবেষক ও প্রকৌশলীরা কাজ চালিয়ে যাবেন। মেটার অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো বলছে, এ পদক্ষেপ মূলত ওয়াংয়ের নেতৃত্বকে আরও দৃঢ় করা এবং এআই ইউনিটের আকার ছোট করে কার্যক্রমকে গতিশীল করার অংশ।
কোম্পানির ভেতরে এফএআইআর ইউনিট ও পণ্যভিত্তিক দলগুলোর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে কম্পিউটিং রিসোর্স নিয়ে প্রতিযোগিতা চলছিল। নতুন করে সুপারইন্টেলিজেন্স ল্যাব প্রতিষ্ঠার পর সেই দ্বন্দ্ব আরও বাড়ে। এবার ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে মেটা সেই জটিলতা কমিয়ে একীভূত কৌশলগত কাঠামো গড়তে চাইছে।
ওপেনএআই ও গুগলের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে তাল মেলাতে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মেটা আক্রমণাত্মকভাবে এআই কার্যক্রম পুনর্গঠন করছে। অবকাঠামো, প্রকল্প এবং মানবসম্পদে তারা ইতোমধ্যেই বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছে।
ছাঁটাইয়ের পর মেটার সুপারইন্টেলিজেন্স ল্যাবের কর্মী সংখ্যা তিন হাজারের নিচে নেমে এসেছে। বুধবার কিছু কর্মীকে জানানো হয়, তাদের চাকরিচ্যুতির কার্যকর তারিখ হবে ২১ নভেম্বর। ততদিন তারা ‘ওয়ার্ক স্টপেজ নোটিশ পিরিয়ডে’ থাকবেন। এই সময়ে তাদের মেটার কোনো কাজ করতে হবে না, তবে অভ্যন্তরীণভাবে অন্য কোনো পদে আবেদন করতে পারবেন।
বিচ্ছেদ সুবিধা হিসেবে কোম্পানি জানায়, চাকরির মেয়াদ অনুযায়ী প্রত্যেককে প্রতি পূর্ণ বছরের জন্য ১৬ সপ্তাহ ও অতিরিক্ত দুই সপ্তাহের বেতন দেওয়া হবে।
সূত্রগুলো জানায়, সম্প্রতি এআই অগ্রগতির ধীরগতিতে সিইও জুকারবার্গ হতাশ ছিলেন। এপ্রিল মাসে লামা–৪ মডেল প্রকাশের পর ডেভেলপারদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সাড়া না পেয়ে তিনি এআই কার্যক্রমে বড় ধরনের রদবদল শুরু করেন। স্কেল এআই-তে বড় বিনিয়োগের পর মেটা গঠন করে নতুন ইউনিট ‘মেটা সুপারইন্টেলিজেন্স ল্যাবস’। এই ইউনিটের নেতৃত্বে রয়েছেন আলেকজান্ডার ওয়াং এবং গিটহাবের প্রাক্তন সিইও ন্যাট ফ্রিডম্যান।
জুলাইয়ে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক আয় ঘোষণা অনুষ্ঠানে মেটা জানায়, ২০২৫ সালে তাদের মোট ব্যয় ১১৪ থেকে ১১৮ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা আগের পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি। কোম্পানির পূর্বাভাস অনুযায়ী, এআই-সম্পর্কিত উদ্যোগগুলোর কারণে ২০২৬ সালে ব্যয়ের গতি আরও বাড়বে।
আগামী সপ্তাহে মেটা প্রকাশ করবে তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক ফলাফল। এর ঠিক আগের দিন, মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানটি ঘোষণা দিয়েছে লুইসিয়ানার গ্রামীণ অঞ্চলে ২৭ বিলিয়ন ডলারের হাইপেরিয়ন ডেটা সেন্টার নির্মাণে ব্লু আউল ক্যাপিটালের সঙ্গে অংশীদারিত্বের।
জুকারবার্গ এক পোস্টে বলেছেন, বিশাল এই ডেটা সেন্টারটি ‘ম্যানহাটনের উল্লেখযোগ্য অংশের সমান আয়তনের’ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন