রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শহীদ আবু সাঈদের হত্যা মামলার তদন্ত শেষে প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন শাখায় জমা দেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) প্রসিকিউশন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি হাতে পেয়েছে। এতে ৩০ জনের সম্পৃক্ততা উঠে এসেছে। আজই (২৬ জুন) অভিযোগপত্র দাখিল করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এর আগে গত ২৪ জুন তদন্ত সংস্থা ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রসিকিউশন সূত্র জানিয়েছে, এই প্রতিবেদনেই মানবতাবিরোধী অপরাধের সুনির্দিষ্ট আলামত ও সাক্ষ্যপ্রমাণ যুক্ত করা হয়েছে।
মামলায় এখন পর্যন্ত চারজন আসামি কারাগারে আছেন। তারা হলেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক আমির হোসেন, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী।
আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, গত ১৫ জুন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এক মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছিল। পরবর্তী শুনানির জন্য ১৪ জুলাই তারিখ ধার্য ছিল।
কিন্তু তার আগেই তদন্ত শেষ করে প্রসিকিউশনে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আবু সাঈদের মামলা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম আনুষ্ঠানিক মামলা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এই মামলার আবেদন ২ মার্চ করা হয়। সে সময়ই আন্দোলনকারী ও সাধারণ ছাত্রদের পক্ষ থেকে অভিযোগ ওঠে, দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও শহীদের মামলায় দেরি কেন? তখন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, আনুষ্ঠানিক মামলা না হলেও তদন্ত চলমান ছিল এবং তা প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
২০২৪ সালের ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রংপুরে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। ওইদিন সরকারিভাবে ‘শহীদ আবু সাঈদ দিবস’ ঘোষণা করা হয়। তার মৃত্যুর পর আন্দোলন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে, তৈরি হয় শোক, বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের স্রোত।
প্রসিকিউশন সূত্র জানিয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের হওয়া এই মামলায় সম্পৃক্ত ৩০ জনের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রমাণ-সাক্ষ্যসহ বিস্তারিত তথ্য প্রতিবেদনেই উপস্থাপন করা হয়েছে।
এ ঘটনায় অভিযোগ গঠন ও বিচারের পরবর্তী ধাপ দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
আপনার মতামত লিখুন :