সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বর্তমান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার একটি নতুন ফোনালাপ ক্লিপ সোমবার (১১ আগস্ট) প্রকাশ্যে এসেছে, যা বর্তমানে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এই ফোনালাপে তিনি ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থান চলাকালে ভয়ঙ্কর উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান করেছেন।
ফোনালাপটি ১৪ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের সঙ্গে হওয়া কথোপকথন। এতে শেখ হাসিনা বলেন, “রাজাকার সবগুলোকে ফাঁসি দিয়েছি, এবার তোদেরও ছাড়ব না।” তিনি ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উল্লেখ করেন এবং ইংল্যান্ডের উদাহরণ দিয়ে বলেন, সেখানে ছাত্ররাজনীতির জন্য কয়েকজনকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে, এমনই কঠোর অ্যাকশন নেওয়ার প্রয়োজন।
অপরাধ তদন্ত সংস্থার ফরেনসিক পরীক্ষায় ফোনালাপটির সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার পর তা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রমাণ হিসেবে জমা দেয়া হয়েছে। প্রসিকিউশন টিম জানিয়েছে, এই অডিও ক্লিপ বিচার কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হবে।
এছাড়া, আদালত অবমাননার মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা শাকিল আকন্দ বুলবুলের সঙ্গে শেখ হাসিনার কথোপকথনের ফুটেজও উল্লেখযোগ্য। ওই অডিওতে শেখ হাসিনা বুলবুলকে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিতে উসকানি দিয়েছেন।
রায়ে বুলবুলের কাছে শেখ হাসিনা বলেন, ওই সব তালিকা করো, অফিসারদের বলো, আমরা তালিকা নেত্রীর কাছে পাঠাচ্ছি, উনি চাইছেন, ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। বুলবুলের উত্তরে তিনি বলেন, “চাকরি সামনেও করতে হবে, এটা ভুলে যেও না।”
আরেক অংশে শেখ হাসিনা বলেন, “আমার তো সারা বাংলাদেশে ২২৭টি মার্ডার কেস আছে। তোমরা তালিকা করো। অন্তত ২২৭ জনকে মারার লাইসেন্স পেয়েছি। আর এক মামলার শাস্তি, আর সোয়া ২০০ মামলায় সেই শাস্তি, তাই না? তো ঠিক আছে, সেই শাস্তি নেব, কিন্তু তার আগে সোয়া ২০০ হিসাব করে নেব।”
ফরেনসিক পরীক্ষার বাইরেও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা বিষয়টির তদন্ত পরিচালনা করেছেন। তদন্তে উঠে এসেছে, ‘এ টিম’ নামে একটি অনলাইনভিত্তিক গোপন গ্রুপের মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপ এবং জুমে আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ কার্যক্রম পরিচালিত হতো। গত ২৫ অক্টোবরের এক গোপন সভায় শেখ হাসিনা উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছিলেন বলে উল্লেখ রয়েছে।
গাইবান্ধার স্থানীয় সাংবাদিক সুমন মিয়া প্রথমে এই অডিও ক্লিপ পেয়েছিলেন এবং তা দ্রুত স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল। এই ঘটনা দেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে এবং বিচার কার্যক্রমে এর প্রভাব পড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
তথ্যসূত্রের মতে, এই ফোনালাপ ও অডিও প্রকাশের পর সংশ্লিষ্ট আদালত ও তদন্ত সংস্থাগুলো ব্যাপক তৎপর হয়ে উঠেছে। প্রসিকিউটররা জানিয়েছেন, প্রমাণাদি সংগ্রহ ও মামলার পরবর্তী ধাপের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমানে এই ফোনালাপ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিক্রিয়া প্রদান শুরু করেছে এবং আগামীদিনে এ নিয়ে নতুন প্রবণতা দেখা দিতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন