সময় কি সত্যিই কখনো দ্রুত কখনো ধীরে চলে? এক মুহূর্তে দিন শেষ হয়ে যায়, আর অন্য সময় যেন ঘণ্টাগুলো থমকে থাকে। পদার্থবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে সময় এক ধ্রুবক, তবুও আমাদের মস্তিষ্ক, আবেগ এবং জীবনের অভিজ্ঞতা এটিকে ভিন্নভাবে অনুভব করায় এবং শুরু হয় রহস্যময় খেলা।
প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের কাছে নতুন করে ধরা দেয়—কখনো উড়ে যায়, কখনো আটকে থাকে—এবং এই খেলাটির রহস্য উন্মোচন করতে গিয়ে আমরা খুঁজে পাই আমাদের নিজস্ব মন ও স্মৃতির ভেতরের জাদু।
নতুন অভিজ্ঞতা বনাম পরিচিত রুটিন
মস্তিষ্কের তথ্য প্রক্রিয়াকরণ সময়ের অনুভূতিকে প্রভাবিত করে। নতুন অভিজ্ঞতা যেমন নতুন জায়গায় ভ্রমণ, ছুটি কাটানো বা নতুন দক্ষতা শেখা, আমাদের মনে অসংখ্য স্মৃতি তৈরি করে। প্রতিটি মুহূর্ত মস্তিষ্ককে মনোযোগ দিয়ে প্রক্রিয়াকরণ করতে হয়, ফলে ফিরে তাকালে মনে হয় সময় দীর্ঘকাল ধরে কেটেছে। মনস্তত্ত্বে এটিকে বলা হয় ‘হলিডে প্যারাডক্স’।
অপরদিকে, পরিচিত রুটিন বা একই ধরনের কাজের মধ্যে মস্তিষ্ক তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রক্রিয়াকরণ করে। নতুন স্মৃতির পরিমাণ কম থাকায়, ফিরে তাকালে মনে হয় সময় দ্রুত কেটে গেছে। তাই সাধারণ দিনগুলো যেন দ্রুত ফুরিয়ে যায়।
আবেগ ও সময়ের সম্পর্ক
আমাদের আবেগও সময়ের বোধকে প্রভাবিত করে।
আনন্দ ও উত্তেজনায় সময় দ্রুত: যখন আমরা মজা করি, ভালোবাসার মানুষদের সঙ্গে সময় কাটাই বা কোনো আকর্ষণীয় কাজ করি, তখন আমাদের মনোযোগ থাকে মুহূর্তের উপভোগে। তাই ঘড়ির কাঁটাকে বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে এবং সময় দ্রুত কেটে যায়।
দুঃখ বা অপেক্ষার সময় ধীর মনে হয়: বিপদ, দুঃখ, বা শারীরিক যন্ত্রণার সময়ে আমরা সময়কে প্রতিটি মুহূর্তে লক্ষ করি। মস্তিষ্ক হাইপার-অ্যালার্ট অবস্থায় থাকে এবং সময় দীর্ঘ মনে হয়।
বয়স ও সময়ের বোধ
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সময়ের অনুভূতি বদলায়।
শৈশবের দীর্ঘ সময়: ১০ বছর বয়সি একটি শিশুর জন্য এক বছর তার জীবনের দশভাগের এক ভাগ। তাই বছরটি দীর্ঘ মনে হয়।
বার্ধক্যের দ্রুততা: ৫০ বছর বয়সি মানুষের জন্য এক বছর তার জীবনের পঞ্চাশ ভাগের এক ভাগ মাত্র। জীবন তুলনায় ছোট হওয়ার কারণে বছরগুলো দ্রুত কেটে যায়। একই সঙ্গে নতুন অভিজ্ঞতার সংখ্যা কম হওয়ায় সময় আরও দ্রুত অনুভূত হয়।
মনোযোগের ভূমিকা
কোনো কাজের প্রতি আমাদের মনোযোগের মাত্রা সময়ের বোধকে প্রভাবিত করে।
গভীর মনোযোগে সময় দ্রুত: বই পড়া, ভিডিও গেম খেলা বা আকর্ষণীয় কোনো কাজ করার সময় আমরা সময়ের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই।
মনোযোগহীনতায় সময় ধীরে: বিরক্তিকর বা একঘেয়ে কাজ করার সময় মস্তিষ্ক বারবার ঘড়ির দিকে তাকায়। ফলে প্রতিটি সেকেন্ড দীর্ঘ মনে হয়।
সময়ের রহস্যের মূল শিক্ষা
সময় নিজে স্থির থাকলেও আমাদের মস্তিষ্ক এটিকে প্রতিটি মুহূর্তে নতুনভাবে ব্যাখ্যা করে। স্মৃতি, আবেগ, মনোযোগ এবং বয়সের প্রভাব মিলে আমাদের সময়ের অনুভূতিকে তৈরি করে।
- সময়কে দীর্ঘ মনে করার উপায়
- প্রতিদিন নতুন কিছু শেখা
- নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করা
- প্রতিটি মুহূর্তকে মনোযোগ দিয়ে উপভোগ কর
এই অভ্যাসগুলো শুধু জীবনকে অর্থবহ করে না, বরং সময়কে দীর্ঘ এবং মূল্যবান মনে করায়। জীবনকে প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করতে শিখলে, সময় কখনোই শূন্যে চলে যায় না।

