খাওয়া এবং গোসল এ দুটি কাজ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। শ্বাস-প্রশ্বাস ও ঘুমের মতোই এই দুটি কাজ গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই স্বাভাবিক অভ্যাস দুটিকে নিয়ে বেশ কিছু প্রচলিত ধারণাও রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, গোসল ও খাওয়ার মধ্যে সম্পর্ক আছে এবং গোসলের পরই খাবার খাওয়া উত্তম। তাই প্রশ্ন জাগে, বিশেষ করে শীতকালে যদি গোসলের আগে খাওয়া হয় তাহলে কি কোনো শারীরিক সমস্যা হতে পারে? বিজ্ঞান এতে কী বলে? চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক।
আয়ুর্বেদিক দৃষ্টিভঙ্গি: গোসলের পর সঙ্গে সঙ্গে খাবেন না
আয়ুর্বেদ মতে, গোসল করে সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া উচিত নয়। কারণ গোসল শরীরকে ঠান্ডা করে, ফলে হজমের জন্য প্রয়োজনীয় ‘অগ্নি’ দুর্বল হয়। এতে রক্ত সঞ্চালন পাকস্থলী থেকে শরীরের অন্যান্য স্থানে সরে যায়, যা হজমকে মন্থর করে। এর ফলে অ্যাসিডিটি, পেটব্যথা বা পেট ফাঁপার মতো সমস্যা হতে পারে—বিশেষত যদি ভারী বা চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া হয়। দীর্ঘদিন এ অভ্যাস চলতে থাকলে বিপাকক্রিয়ার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং ওজন বৃদ্ধি বা দেহে ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে।
যা করতে পারেন
গোসলের পরে অন্তত ২০ থেকে ৬০ মিনিট বিরতি রেখে খাবেন। এতে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক হবে এবং হজমশক্তি সক্রিয় হবে।
চাইলে খাওয়ার আগে গরম পানিতে গোসল করতে পারেন। এতে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ে, শরীরের তাপমাত্রা ঠিক থাকে এবং হজম প্রক্রিয়া প্রস্তুত হয়।
কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, সকালে নাশতার আগে গোসল করলে শক্তি বাড়ে এবং শরীর-মন সতেজ থাকে।
আধুনিক বিজ্ঞান কী বলছে?
বৈজ্ঞানিকভাবে দেখা যায়, গোসলের পরপরই খেলে বেশিরভাগ সুস্থ মানুষের হজমে তেমন সমস্যা হয় না। শরীরের তাপমাত্রা সামান্য কমলে বা বাড়লে হজম এনজাইমের কার্যক্রমে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে এমন প্রমাণ নেই। উষ্ণ গোসল রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে পারে, যা গোসল করেই খেলে সামান্য অস্বস্তি তৈরি করতে পারে, কিন্তু তা গুরুতর নয়। ঠান্ডা বা গরম পানি—যেকোনো গোসলেই রক্তনালির পরিবর্তন হলেও তা ক্ষুদ্রান্তে পুষ্টি শোষণে বাধা দেয় না।
তবে গোসলের পরই ভারী খাবার খেলে পেট ফাঁপা বা অস্বস্তি হতে পারে, যার কারণ সাধারণত দ্রুত খাওয়া, ভুল ভঙ্গিতে বসা বা অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ।

