ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সামরিক সংঘাতে পরিস্থিতি ভয়াবহ মোড় নিচ্ছে। দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হামলায় মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই সংঘর্ষকে ‘অযৌক্তিক ও বিপজ্জনক’ আখ্যা দিয়ে কড়া নিন্দা জানিয়েছেন।
শুক্রবার ইসরায়েল তাদের দীর্ঘ পরিকল্পিত হামলা চালায় ইরানের নিউক্লিয়ার ও সামরিক স্থাপনায়। পাল্টা জবাবে শনিবার ভোররাতে তেলআবিব ও জেরুজালেমে শতাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে আঘাত হানে ইরান।
শনিবার সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এক টেলিফোন আলাপে পুতিন বলেন, ‘ইসরায়েলের এই আগ্রাসন সংঘাতকে ভয়ানক মাত্রায় নিয়ে যেতে পারে।’ তিনি আরো জানান, ইরান-আমেরিকার পরমাণু আলোচনা ফের চালুর বিষয়েও তারা আলোচনা করেছেন।
পুতিনের শীর্ষস্থানীয় বৈদেশিক নীতিবিষয়ক উপদেষ্টা এবং ক্রেমলিনের অন্যতম প্রভাবশালী কূটনৈতিক কর্মকর্তা ইউরি উশাকভ জানান, দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে প্রায় ৫০ মিনিট ফোনালাপ হয় এবং এটি ছিল ‘গঠনমূলক ও তাৎপর্যপূর্ণ’।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান কড়া ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘জায়োনিস্ট আগ্রাসন অব্যাহত থাকলে তার জবাবে আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী আরও তীব্র ও শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া জানাবে।’
এদিকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ পাল্টা হুমকিতে বলেন, ‘ইরান ক্ষেপণাস্ত্র চালানো বন্ধ না করলে তেহরান জ্বলতে থাকবে।’ শনিবার এক সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি বলেন, ‘আমাদের নাগরিকদের ওপর আঘাত এলে ইরানকে চড়া মূল্য দিতে হবে।’
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার এই সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবিমানসহ সামরিক সরঞ্জাম পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এটি একটি নিরাপত্তা-সংকট এবং আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।’
ইসরায়েলের ড্রোন হামলায় ইরানের দক্ষিণ পার্স গ্যাসশোধনাগারে ‘বিস্ফোরক আগুন’ লাগে বলে জানায় দেশটির একটি সংবাদমাধ্যম। আগুন নেভাতে সেখানে দমকল বাহিনী কাজ করছে বলে জানিয়েছে ফার্স বার্তা সংস্থা।
সংঘাতের জেরে আগামীকাল ওমানে অনুষ্ঠেয় ইরান-যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু আলোচনা বাতিল করা হয়েছে। ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাদর আল বুসাইদি এক্স পোস্টে লেখেন, ‘কূটনীতি ও সংলাপই একমাত্র পথ, তবে রবিবারের বৈঠক আর হচ্ছে না।’
ভারত সরকার এই উত্তেজনার মধ্যে ইরানে বসবাসকারী নাগরিকদের জন্য বিশেষ জরুরি নম্বর চালু করেছে। পাশাপাশি, ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষ নিয়ে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের বিবৃতি থেকে নিজেদের বিরত রেখেছে নয়াদিল্লি। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা সংলাপ ও কূটনীতিক পথেই উত্তেজনা নিরসনের আহ্বান জানায়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই যুদ্ধ শুধু ইরান-ইসরায়েলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই; বরং গোটা অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতাই এখন অনিশ্চয়তার মুখে।
আপনার মতামত লিখুন :