গত বছরের ২১ আগস্ট বিসিবি সভাপতির পদ থেকে নাজমুল হোসেন পাপনের পদত্যাগের পর দায়িত্ব পেয়েছিলেন বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার ফারুক আহমেদ। তবে মাত্র ৯ মাসের মাথায় শেষ হয়ে গেল তার বিসিবি অধ্যায়।
গতকাল শুক্রবার (৩০ মে) রাতেই বিসিবির পরিচালকের পদ থেকে ফারুক আহমেদকে সরিয়ে দেয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। বিসিবির অভ্যন্তরীণ চিঠি ও বিপিএলকে ঘিরে অনিয়মের অভিযোগে গঠিত সত্যানুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনার পরই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পাশাপাশি, বুলবুলকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাউন্সিলর হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়, যা বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভাপতি হওয়ার শর্ত পূরণ করে।
বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিসিবি সভাপতি হতে হলে বিসিবি পরিচালক পদ থাকতে হয়। ফারুক আহমেদের পরিচালক পদ চলে যাওয়ায় বিসিবি সভাপতির পদ শূন্য হয়ে যায়। সেই শূন্য পদে আজ বিসিবির এক বোর্ড সভায় জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিয়ানক ও অভিষেক টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে বিসিবির সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে।
৫ আগস্টের পর দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে এ পর্যন্ত বিসিবিতে কেমন ছিল ফারুক আহমেদের অধ্যায় এবং কী ঘটেছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ডে পালাবদলের এই সময়ে তা এক নজরে দেখে নেওয়া যাক:
৯ আগস্ট, ২০২৪: যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া।
১৯ আগস্ট: বিসিবির পরিচালক পদ ছাড়েন জালাল ইউনুস। তিনি মূলত জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মনোনীত পরিচালক ছিলেন।
২১ আগস্ট: বিসিবি সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন তৎকালীন সভাপতি নাজমুল হোসেন পাপন। সেদিনই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে বিসিবির পরিচালক মনোনীত হন ফারুক আহমেদ ও নাজমুল আবেদীন ফাহিম। এরপর বিসিবির পরিচালকদের ভোটে ফারুক আহমেদকে বিসিবির সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। দায়িত্ব পেয়েই ফারুক বলেছিলেন, মেয়াদ যত দিনই হোক ক্রিকেটকে এগিয়ে নেবেন তিনি।
২৯ আগস্ট: বিসিবির পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেন শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ও তানভির আহমেদ টিটু।
১১ সেপ্টেম্বর: বিসিবির পরিচালক পদ থেকে সরে দাঁড়ান খালেদ মাহমুদ সুজন।
১৫ অক্টোবর: হাথুরুসিংহে বরখাস্ত করে বিসিবি। সেবার কারণ হিসেবে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকে অপদস্ত করাকে উল্লেখ করেছিলেন বিসিবি সভাপতি। সেদিনই বাংলাদেশ দলের অন্তর্বর্তীকালাঈন কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় ফিল সিমন্সকে।
১২ নভেম্বর: বিপিএল শুরুর তারিখ জানায় বিসিবি (৩০ ডিসেম্বর শুরু)
৩ ডিসেম্বর: বিপিএলের থিম সংয়ের কয়েক লাইন লিখে দেন ড. ইউনুস- এমনটাই জানান আসিফ মাহমুদ। তবে প্রধান উপদেষ্টার নাম জড়িত হওয়ার পরেও বিপিএলের শুরুতেই অব্যবস্থাপনা দেখা যায়। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা।
৩০ ডিসেম্বর: বিপিএলের প্রথম দিনেই টিকিট না পেয়ে স্টেডিয়াম এলাকায় ভাঙচুর চালায় সমর্থকরা, ক্ষতিগ্রস্ত স্টেডিয়ামের গেট।
৩১ ডিসেম্বর: বিপিএলের টিকেট কালোবাজারি দেখা প্রথম দিন থেকেই। এরপর টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় দিন এসব নিয়ে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ বলেছিলেন, ভালো কাজ করলে তো মানুষ বেশি পেছনে লাগে।
১ জানুয়ারি: অব্যস্থাপনায় শুরু হওয়া বিপিএল নিয়ে বিসিবি সভাপতি ফারুক জানিয়েছিলেন, চার মাসে ম্যাজিকাল কিছু করা যাবে না।
২ জানুয়ারি: এদিন সবচেয়ে বড় খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। বিপিএল নিয়ে অসন্তুষ্টির জেরে বোর্ড সভাপতির সঙ্গে ক্রীড়া উপদেষ্টার প্রেস সচিবের বিরুদ্ধে বিসিবি সভাপতির সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠে।
৫ জানুয়ারি: বিপিএলের প্রথম সপ্তাহে ফের আলোচনা আসেন ফারুক আহমেদ। এবার তার সঙ্গে নয়, উল্টো তার বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠে। বোর্ড পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিমের সঙ্গে দুর্ব্যবহার খবর বেরিয়ে আসে। এই প্রসঙ্গে বিসিবি প্রধান বলেন, কার সাথে কী বলেছি হয়তো আমার মনেও নেই।
৩১ জানুয়ারি: বিপিএলের একাধিক ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক নিয়ে টালবাহানা শুরু করলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ‘সত্যানুসন্ধান’ কমিটি গঠন করে।
১৭ ফেব্রুয়ারি: বিতর্কের বিপিএলে সফলতার বাণী আসে টিকিট বিক্রি থেকে। আগের দশ আসর মিলিয়ে যত টাকা, এবার বিপিএলেই টিকিট বিক্রি তার কাছাকাছি বলে জানান বিসিবি সভাপতি।
১৫ এপ্রিল: বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে বিসিবিতে দুদকের অভিযান পরিচালনা করা হয়।
২৪ এপ্রিল: দুদকের অভিযানের পর খবর বের হয় ফারুক আহমেদের আর্থিক নয়ছয় নিয়ে। ১১৮ কোটি টাকা নিয়ে বিসিবি সভাপতির স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠে। যদিও পরবর্তীতে তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে জানান, দুর্বল থেকে টাকা সরিয়ে বোর্ডের স্বার্থে সবল ব্যাংকে রাখা হয়েছিল।
২৬ এপ্রিল: জুলাই আন্দোলনের আসামিকে বিসিবি অফিশিয়াল বানানোর অভিযোগ উঠে ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে। জবাবে সে সময় তিনি না দেখে মন্তব্য করবেন না বলে জানান।
৩ মে: পতিত সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগের জবাবে ফারুক আহমেদ গণমাধ্যমে মুখ খুলেন। তিনি বলেন, এসবের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই। যদি থাকত তিনি এখানে আসতেন না। এবং আরও বলেন, আমি কিন্তু প্রেসিডেন্ট এই নতুন সরকারের, এটা আপনাদের বুঝতে হবে।
২৮ মে: এদিন রাতে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর রটে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের পদে পরিবর্তনের ইচ্ছা জানিয়েছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা।
২৯ মে: তবে ২৯ মে দুপুরে ক্রীড়া উপদেষ্টা পরিবর্তন চাইলেও পদত্যাগ করবেন না বলে জানান ফারুক আহমেদ। এদিন সন্ধ্যায় ‘স্বৈরাচারী’ ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে চিঠি দেন আকরাম খান ছাড়া বাকি ৮ বিসিবি পরিচালক। রাতেই নাটকীয়ভাবে ফারুক আহমেদের বিসিবির পরিচালক পদ বাতিল করে এনএসসি। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাউন্সিলর হন বুলবুল।
৩০ মে: শুক্রবার (৩০ মে) বিকেলে এনএসসি কোটায় বিসিবির পরিচালক হন বুলবুল। সন্ধ্যা গড়াতেই পরিচালকদের ভোটে বিসিবির সভাপতি নির্বাচিত হন বুলবুল।
আপনার মতামত লিখুন :