শুক্রবার, ০২ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


প্রেস বিজ্ঞপ্তি

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৫, ১১:৫০ এএম

অতঃপর স্বস্তি সমাজসেবা অধিদপ্তরে একে একে নামছে আওয়ামী সুবিধাভোগীরা

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৫, ১১:৫০ এএম

অতঃপর স্বস্তি সমাজসেবা অধিদপ্তরে একে একে নামছে আওয়ামী সুবিধাভোগীরা

ছবি: সংগৃহীত

বিগত ৫ আগস্ট জুলাই বিপ্লবে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতনের পরে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে পরিবর্তনের হাওয়া শুরু হলেও সমাজসেবা অধিদপ্তর চলতেছিল আওয়ামী দোসরদের দ্বারাই। যেন সমাজসেবা অধিদপ্তর ছিল আওয়ামীলীগের শেষ ঘাঁটি। সমাজকল্যাণ  মন্ত্রণালয়ে আওয়ামী সচিব ও অধিদপ্তরের আওয়ামী মহাপরিচালকের বদলী হলেও দপ্তরটির অভ্যন্তরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ঘাপটি মেরে থাকে আওয়ামী দোসররা। এ নিয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে বিরাজ করছিল চাপা ক্ষোভ। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের আওয়ামী সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রকাশিত হয় ধারাবাহিক সংবাদ।

অনুসন্ধানে জানা যায় যে, সমাজসেবা অধিদপ্তরে ছিল বিগত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী আরেকটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী যার নেতৃত্বে ছিলেন অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান। অধিদপ্তরের সকল কলকাঠি নাড়া হত তারই ইশারা এবং আদেশে। অধিদপ্তরের পরিকল্পনা অধিশাখার প্রধান হয়ে বিভিন্ন ভুয়া প্রজেক্ট বানিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা আওয়ামী নেতাদের পকটে পুরে দেয়ার মূল কারিগরও ছিলেন তিনি। 

প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করতে ব্যাবহার করতেন প্রকল্পের টোপ। এমনই একটি ভুঁইফোঁড় প্রকল্প হচ্ছে “সেফ মাদারহুড থ্রো লাইভলিহুড ইমপ্রুভমেন্ট ফ্যাসিলিটি (সেফ লাইফ)” যেটি নেয়া হয়েছিল শেখ হাসিনার চাচা শেখ কবির কে খুশি করার জন্য। শুধু এটি নয় যৌথ বাস্তবায়নাধীন প্রজেক্টগুলো কে কোনটি পাবে এবং কে কোন প্রজেক্টের পিডি হবেন সেসব ঠিক করতেন এই কামরুজ্জামান গং। 

গংয়ের আরেকজন প্রভাবশালী সদস্য স্বপন কুমার হালদার পিডি হন “উন্নয়নের মহাসড়কে জয়রথে বিজয়ের জয়ধ্বনি” নামে একটি বায়বীয় প্রজেক্টের যেখানে সরকার দেয় ১১৯৮ কোটি টাকা। মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বর্তমানে নিজেও ২ টি প্রজেক্টের পিডি;তিনি ও তার পরিবার ব্যাবহার করেন প্রজেক্টের সার্বক্ষণিক গাড়ী। 

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পুরোটা সময় ছিলেন অপ্রতিরোধ্য।উত্তর বংগে বাড়ি হওয়ার কারণে সাবেক মন্ত্রী নুরুজ্জামানের সিন্ডিকেটের প্রভাবশালী সদস্য হয়ে যান।মন্ত্রীর আশীর্বাদ থাকায় সমাজসেবা অফিসার্স এসোসিয়েশনের রাজনীতিতে টেক্কা দেন গোপালগঞ্জ সিন্ডিকেটের শাফায়েত হোসেন তালুকদার( সাবেক মহাসচিব) কে। ব্যাচ নির্বাচনে জয়লাভ করেই আওয়ামী আনুগত্য প্রকাশ করতে অতি উৎসাহী হয়ে পূর্ণ প্যানেল নিয়ে শেখ মুজিবের মাজার জিয়ারত করতে টুংগীপাড়া যান।

এই গোষ্ঠীর অফিস সমাজসেবা অধিদপ্তরে হলেও আদতে তারা সময় কাটাতো গণভবন, ধানমন্ডি ৩২, আওয়ামীলীগের দলীয় অফিসসহ বিভিন্ন আওয়ামী মন্ত্রী এমপিদের বাসায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজারে শপথ নেয়া এই গোষ্ঠী ৫ ই আগষ্ট আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতনের পর বেশভুষা বদলে আওয়ামী বিরোধীর ভং ধরেন কিন্তু আদতে তারা বাস্তবায়ন করতো পতিত ফ্যাসিবাদের বিভিন্ন এজেন্ডা। 

আওয়ামীলীগের সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের সময়ে উপপরিচালক (প্রশাসন) পদে পদায়ন পাওয়া কামরুজ্জামান গংয়েরই আরেক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, কসবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতির সন্তান এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোস্তফা মাহমুদ সারোয়ারকে নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা। নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু সাবেক ছাত্রলীগের জুনিয়রদেরকে নিয়ে এই কর্মকর্তা গড়ে তুলেছিলেন নিজস্ব এক বলয়। বদলী বানিজ্য থেকে শুরু করে টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদেরকে সেল্টার দেয়াসহ নানান অপকর্ম করতেন তিনি ও তার এই প্রভাব বলয়। 

জানা যায় যে, রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় এক সমাজসেবা অফিসারের প্রকাশ্য দুর্নীতির খবর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে প্রচারিত হলেও নিজস্ব বলয়ের লোক হওয়ায় সে বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি। তাছাড়া অধিদপ্তরে সংশ্লিষ্ট পদ না থাকা সত্ত্বেও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে তিনি অধিদপ্তরে বদলী করে আনেন এবং সংশ্লিষ্ট পদের যোগ্য কর্মকর্তা কর্মচারীদের বদলী করে রাখেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তার এসব কর্মের মূল সহযোগী ছিলেন তার ব্যাক্তিগত কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ যে কিনা তারই বিশ্ববিদ্যালয়ের জুনিয়র এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পদধারী। 

ফিল্ড সুপারভাইজার পদধারী হয়েও সে বছরের পর বছর পোস্টিং নিয়ে থাকছেন অধিদপ্তরে অথচ মাঠপর্যায়ে ফিল্ড সুপারভাইজারের তীব্র সংকট। সহকারী সমাজসেবা অফিসার থেকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে বদলি করে আনেন কয়েকজন জুনিয়রকে এবং তাদের দিয়ে বিভিন্ন সংগঠন খুলে নিজ কবজায় রাখেন অধিদপ্তরের রাজনীতি। যে বা যারা তাদের অপকর্ম নিয়ে কথা বলতো তাদের ঘাড়ে নেমে আসতো বদলীসহ নানারকম হয়রানির খড়গ। 

তাছাড়া তিনি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিনে নানান কটুক্তি করে দীর্ঘ প্রবন্ধ লিখেন যা নিয়ে সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়। অধিদপ্তরের সাধারণ কর্মকর্তা কর্মচারীরা এ নিয়ে ক্ষোভে ফুসে উঠেন। সংশ্লিষ্ট মহলে সমালোচনা তীব্র হলে গত ৩০/০১/২০২৫ তারিখে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক অফিস আদেশে সরিয়ে দেওয়া হয় আওয়ামী দোসর দুর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তাকে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্বায়িত্ব নেয়ার পর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দ্বায়িত্ব নেন মাননীয় উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ এবং দ্বায়িত্ব নেয়ার পর পরই তিনি অধিদপ্তরের দুর্নীতিবাজ ও ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিবাদী আওয়ামীলীগের সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের বিষয়ে সরব হন এবং উচ্চকিত বক্তব্য দেন। মাননীয় উপদেষ্টার বক্তব্যকে কটাক্ষ করতেও ছাড়েনি আওয়ামী সুবিধাভোগী এই গোষ্ঠীটি। এ সংক্রান্ত পোস্ট ও ভিডিও ফেসবুক ও ইউটিউবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। 

বিগত ফ্যাসিস্ট মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, নুরুজ্জামান আহমেদ ও দীপু মনির আমলে অত্যন্ত প্রভাব বিস্তারকারী এই সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে অবশেষে নড়ে চড়ে বসে প্রশাসন। উপপরিচালক (প্রশাসন) মোস্তফা মাহমুদ সারোয়ারের পর গত ০৫/০২/২০২৫ তারিখে বদলী করা হয় সেই অতিরিক্ত পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মোহাম্মদ কামরুজ্জামানকে। 

কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রতিক্রিয়া জানতে অধিদপ্তরের একাধিক ব্যাক্তির সাথে যোগাযোগ করা হলে এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানান, বদলির আদেশে অধিদপ্তরের সাধারণ কর্মকর্তা কর্মচারীরারা খুশি হয়েছেন এবং স্বস্তি পেয়েছেন। তারা আশা রাখেন এই বদলীর আদেশ অধিদপ্তরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবে এবং কর্ম চাঞ্চল্য বাড়াবে যার ছোয়া ইতোমধ্যে অধিদপ্তরে লেগেছে। এজন্য তারা মাননীয় উপদেষ্টা ও সম্মানিত সচিব মহোদয়কে ধন্যবাদ জানান।
তবে আওয়ামী সরকারের এসকল পতিত এজেন্ট যেন বিভিন্ন উছিলায় পুনরায় পুনর্বাসিত হতে না পারে সে বিষয়ে প্রশাসনকে সজাগ থাকতে হবে মর্মেও জানান তারা কেননা তাদের হাত অনেক লম্বা।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!