অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে সংস্কারের নামে কালক্ষেপণের অভিযোগের মধ্যেই সংস্কার নিয়ে জনমত জরিপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
কমিশনের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে আজ বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
বৈঠকে উপস্থিত এক সদস্য জানান, সংস্কার প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বাড়াতে এই জনমত জরিপের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জরিপটি মাঠ পর্যায়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে এবং অনলাইনে পরিচালনার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। আগামী দু-তিন দিনের মধ্যেই কমিশনের কারিগরি সহায়তা দলের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা শুরু হবে বলে তিনি জানান।
বৈঠকের ওই সদস্য আরও জানান, সংলাপের দ্বিতীয় পর্ব কবে এবং কীভাবে অনুষ্ঠিত হবে, সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহের শেষ নাগাদ দ্বিতীয় পর্বের সংলাপ শুরু হতে পারে।
তবে, বিএনপিসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল বলছে, জনগণ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য অভ্যুত্থানের মাধ্যমে হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়েছে। দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে ভোটাধিকার ফিরিয়ে না দিলে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরবে না।
তারা বলছে, সংস্কারের নামে সময়ক্ষেপণ করলে দেশ আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। তাই, প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছে দলগুলো।
তাদের স্পষ্ট বক্তব্য, সামগ্রিক সংস্কার নির্বাচিত সরকার এসে জাতীয় সংসদের মাধ্যমেই করবে।
দেড় ঘণ্টাব্যাপী এ সভায় অংশগ্রহণ করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, বিচারপতি এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া।
অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন, আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পরিকল্পনা উপদেষ্টা প্রফেসর ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, পরিবেশ এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, জ্বালানি ও সড়ক যোগাযোগ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, এটি মূলত একটি নিয়মিত বৈঠক, যার উদ্দেশ্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শের অগ্রগতি সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য দেওয়া।
উল্লেখ্য, সংস্কার নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ২০ মার্চ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম ধাপের সংলাপ শুরু করেছে। গতকাল পর্যন্ত কমিশন ২৭টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা সম্পন্ন করেছে।
এবং আগামী ১৫ মে’র মধ্যে প্রথম ধাপের সংলাপ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এরপরই দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে কমিশনের।