আরমান মোল্লা ওরফে নাহিদ। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন। স্ত্রী ও তিন ছেলে মেয়ে নিয়ে ছিল তার সংসার।
কিন্তু জুলাই গণ-আন্দোলনে রাজপথে নিহত হওয়ার পর আরমান মোল্লার পরিবারের আসে দুঃসময়।
আরমান মোল্লার স্ত্রী সালমা বেগম তিনটি নাবালক সন্তান নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন।
উপায় না পেয়ে তিনি বড় মেয়ে মাহি (১০) ও ছেলে রাফিকে (৭) দিয়েছেন একটি এতিমখানায়।
আর ছোট মেয়ে আফরামনিকে (৩) নিয়ে কোনোমতে দিন অতিবাহিত করছেন।
গত বছরের ২১ জুলাই নরসিংদীর শিলমান্দী ইউনিয়নের সামনে আন্দোলনরত অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান আরমান।
তিনি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার কলাগাছিয়া নয়াপাড়ার এলাকার বাসিন্দা। সরকার প্রকাশিত গেজেটে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদের তালিকায় আরমান মোল্লার নাম ৪৪১ নম্বরে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
তার স্ত্রী সালমা বেগম বলেন, ‘আমার জামাই ঝালমুড়ি বেচত, আমার ঘরে টাকা-পয়সা কম ছিল ঠিক। কিন্তু সুখের কমতি ছিল না।’
‘একটা গুলি আমাগো জীবন তছনছ কইরা দিল। ভালা মানুষ জামাইডা দেশের জন্য আন্দোলনে গিয়া গুলি খাইয়া মইরা গেল।’
‘আমার এখন আর চলার মতোন অবস্থা নাই। এল্লিগা, কোনো উপায় না দেইখা বড় মাইয়া আর একমাত্র পোলাডারে এতিমখানায় দিয়া সাইরা আমি এহন বুকে পাত্থর বাইন্ধা মরার মতন ঘরে পইরা রইছি।’
আরমানের পুরো পরিবার এখন তার অসুস্থ শ্বশুরের ওপর নির্ভরশীল। তিন সন্তান নিয়ে সালমা তার বাবা মীর আলীর সঙ্গে বসবাস করছিলেন। সংসারের খরচ মেটাতে না পেরে বড় মেয়ে ও ছেলেকে এতিমখানায় দিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।
তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আব্বার পক্ষে আমাগো সবার খরচ দেওয়া সম্ভব নাহ্। এল্লিগা মাইয়া আর পোলাডারে এতিমখানায় দিয়া দিছি।’
সালমা বলেন, ‘আমার কোমরের হাড় ক্ষয় হওয়ার পর থেকে আমার জামাই ঘরের কাম-কাইজ করতে আমারে সাহায্য করত। আমি এই শইল লইয়া এহন ক্যামনে বাইরে কাম করমু?’
‘কোমরের লিগা আমি ঘরের কাইজ-কাম বেশি করতে পারি না। আমার কোমরের ব্যথার জন্য মাসে ৮০০ টাকার অষুধ লাগে। পেটে ঠিকমতো ভাতই জুটে না, অষুধ খামু কই থিকা। কোমরের ব্যথায় আমি মাঝেমধ্যে বিছানা থেইকা উঠতে পারি না। আমার স্বামী ছাড়া আমাদের আর কেউ নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি সরকারের কাছে, সকলের কাছে সাহায্য চাই। আমারে একটু সাহায্য করেন, যাতে আমি আমার স্বামী শহীদ আরমান মোল্লার রেখে যাওয়া পোলাপানগুলারে আমার কাছে রাইখা মানুষ করতে পারি। শহীদের সম্মান রাখতে পারি।’