ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২২ মে, ২০২৫

বাপেক্স ব্যবস্থাপক মোস্তফার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: মে ২১, ২০২৫, ০৯:৫০ পিএম
বাপেক্সের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) একেএম মোস্তফা হাসান। ছবি-রূপালী বাংলাদেশ

বিনা দরপত্রে পরিবহন ভাড়া নেওয়া, তেলের ভুয়া বিল প্রদর্শন করে বাপেক্স থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও কর্মচারীদের পদোন্নতিতে অনিয়মসহ নানা অভিযোগ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) একেএম মোস্তফা হাসানের বিরুদ্ধে।

ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত এই কর্মকর্তা সরকারি চাকরিবিধি না মেনে একই পদে গত ১০ বছর কর্মরত বলে অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরে দুর্নীতি দমন কমিশন, জ্বালানি সচিব ও বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিচালক বরাবর আবেদন করেছেন নাজমুল ইসলাম নামে এক ভুক্তভোগী।

বুধবার (২১ মে) দুর্নীতি দমন কমিশন, জ্বালানি সচিব ও বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তারা জানান, বাপেক্স ব্যবস্থাপক প্রশাসন একেএম মোস্তফা হাসানের বিরুদ্ধে নাজমুল ইসলাম নামের এক ভুক্তভোগী একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। 

সেই অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান ও তদন্তে নেমেছে সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, তার বিরুদ্ধে আগেও অভিযোগ ছিল। নতুন করে লিখিত অভিযোগ পড়ার কারণে সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি আমলে নিয়ে কাজ করছে বলে জানা গেছে।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, বাপেক্সের ব্যবস্থাপক প্রশাসন এ কে এম মোস্তফা হাসান বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের নিয়োগকৃত একজন কর্মকর্তা। এর আগে বহুবার তার নিয়োগ অডিট আপত্তি হলেও তিনি গত ৮ থেকে ১০ বছর বহাল তবিয়তে রয়েছেন। 

এ ছাড়া তিনি বাপেক্সের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আনা নেওয়ার জন্য ২৬টি মাইক্রোবাস ও ছয়টি মিনিবাস টানা ১৫ বছর যাবত বিনা দরপত্র আহ্বান করে সময় বৃদ্ধির মাধ্যমে আওয়ামী ফ্যাসিস্টের অন্যতম আমির হোসেন আমুর ভাগিনা বলে খ্যাত মেসার্স তন্বিতা সার্ভিসের স্বত্বাধিকারী বাদল এবং তার সহযোগী মোহাম্মদ নেসারকে এককভাবে সুযোগ করে দেন। এর মাধ্যমে সংস্থার কোটি কোটি টাকা লুটপাট করছেন। 

এ ছাড়াও বিপুল পরিমাণ কমিশনের ভিত্তিতে তিনি বাপেক্সের সব স্থানীয় ক্রয়-কার্য সম্পাদন করে থাকেন। বাপেক্সের অগ্নি নিরাপত্তা সিস্টেমটি তার নিয়ন্ত্রণে এবং সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবস্থাপনায় তিনি কাজটি সম্পাদন করেছেন এবং বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। যা ফায়ার সেফটি রুলসের সঙ্গে মারাত্মক সাংঘর্ষিক ও ঝুঁকিপূর্ণ। বিভিন্ন সময় কর্মচারীরা প্রতিবাদ করলে তাদের বদলি ও চাকরিচ্যুতির হুমকি দেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়, সাবেক জ্বালানি সচিব নুরুল আমিনের জন্য সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে অবৈধভাবে নাভানা মোটরসের মাধ্যমে পাঁচ কোটি টাকার গাড়ি ক্রয়ের দুর্নীতি সত্যতা পাওয়া গেছে, যা বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে তুলে ধরা হয়েছে।

এ ছাড়াও বিভিন্ন স্থানীয় ঠিকাদার ও সাধারণ সরবরাহকারীদের ওয়্যার কোয়াটার পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে আসছেন। তার বিরুদ্ধে বাপেক্সে চলাচলরত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের গাড়ি চলাচলের জন্য জ্বালানি সরবরাহ ক্রয়ের বিপরীতে ফিলিং স্টেশনকে ভুয়া বিল প্রদর্শন করে বাপেক্স থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতেরও অভিযোগ রয়েছে। 

এ ছাড়াও তিনি ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) থাকা অবস্থায় অস্থায়ী কর্মচারী নিয়োগে বিপুল পরিমাণে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। তার অধীনে আউটসোর্সিং হতে রাজস্ব খাতে, বহিরাগত কর্মচারী নিয়োগ করা হয়েছে।

অথচ দীর্ঘদিন যাবত বাপেক্সে কর্মরত অস্থায়ী শ্রমিকদের স্থায়ীকরণ করা হচ্ছে না। প্রতিটি অস্থায়ী নিয়োগে প্রত্যেক কর্মচারী কাছ থেকে এক থেকে দেড় লাখ টাকা করে সর্বমোট ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। 

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, এ কে এম মোস্তফা হাসান পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যানের সমমানের দাপ্তরিক স্পোর্টস পাজেরো ভিআইপি গাড়ি ব্যবহার করেন, যা তার চাকরিরত গ্রেডের আওতাভুক্ত না। এ ছাড়াও বাপেক্সের সব প্রকার স্থানীয় কেনাকাটা মোস্তফা হাসানের মাধ্যমে সম্পাদন করা হওয়ায় তিনি বহিরাগত স্থানীয় ঠিকাদারদের বাপেক্সে পুনর্বাসন করছেন। নতুন কোনো ঠিকাদার যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করলে তাকে নিরুৎসাহিত করেন এবং বিভিন্ন বহিরাগত নেতাদের দিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেন। 

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে একে এম মোস্তফা হাসান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘একটি মহল হয়তো আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে। তবে তাদের অভিযোগ সত্য নয়।’

অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্টরা আপনার বিষয়ে অনুসন্ধান বা তদন্তের জন্য ডাকছে কি না?- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আপাতত কোনো মন্তব্য করতে চাইছি না।’