ঢাকা শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫

এনবিআরকে দুই ভাগ করছে না সরকার, আগের নিয়মে চলবে কাজ

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ২৩, ২০২৫, ০৯:০১ এএম
এনবিআর বিভক্তি সংক্রান্ত অধ্যাদেশ সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

আপাতত এনবিআরকে দুই ভাগ করছে না সরকার। আন্দোলনরত কর্মকর্তাদের উদ্বেগ এবং অধ্যাদেশ বাস্তবায়নে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় এনবিআর বিভক্তি সংক্রান্ত অধ্যাদেশ সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) অর্থ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা গাজী তৌহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা (২০২৫)’ অধ্যাদেশটি সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত এনবিআরের কার্যক্রম আগের নিয়মেই চলবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, যেহেতু অধ্যাদেশটি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সংশোধন দরকার এবং এটি একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া, তাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সব কার্যক্রম আগের মতোই চালু থাকবে এবং কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডারের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বিদ্যমান ব্যবস্থার অধীনে সব কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

এতে আরও বলা হয়, ‘বিসিএস (কর) ও বিসিএস (শুল্ক ও আবগারী) ক্যাডারের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখেই পৃথকীকরণের প্রশাসনিক কাঠামো কীভাবে প্রণীত হবে, তা এনবিআরসহ সব গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে নির্ধারণ করা হবে।’

এই আলোচনার ভিত্তিতেই অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে বলে জানানো হয়।

এ ছাড়া, বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, কাস্টমস ও কর ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদ বা মর্যাদা কমানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। বলা হয়েছে, ‘বরং সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন হলে তাদের পদসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং সচিব পদে নিয়োগসহ পদোন্নতির সুযোগও অনেক বাড়বে।’

বলা হয়, অধ্যাদেশ জারির পর নবগঠিত দুই বিভাগের জন্য নতুন সাংগঠনিক কাঠামো তৈরিসহ বহু কাজ এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।

‘দুইটি নতুন বিভাগের জন্য ‘অ্যালোকেশন অব বিজনেস’ নির্ধারণ, আয়কর আইন, কাস্টমস আইন, মূল্য সংযোজন আইন এবং সংশ্লিষ্ট বিধি ও প্রবিধানে পরিবর্তন আনাও সময়সাপেক্ষ কাজ,’ বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থে অর্থবছরের শেষ সময়ে জাতীয় বাজেট কার্যক্রম এবং রাজস্ব আহরণে নিয়োজিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে অফিস সময়ে দপ্তরে উপস্থিত থেকে তাদের স্ব-স্ব দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালনের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় কার্যক্রম চালু রেখে এবং সম্মানিত করাদাতাদেরকে কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদান করে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেগবান করার জন্য অনুরোধ করা হলো।’

এদিকে এর আগে এ দিন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে গঠিত একটি প্রতিনিধিদল সম্প্রতি পাস হওয়া এনবিআরের নীতি ও ব্যবস্থাপনা কার্যাবলী পৃথককারী অধ্যাদেশটি বাতিলের দাবি জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেয়।

প্রতিনিধিদলে ছিলেন অতিরিক্ত কর কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকা, হাসান মুহম্মদ তারেক রিকাবদারসহ মোট পাঁচজন। তারা স্মারকলিপিটি প্রধান উপদেষ্টার সহকারী একান্ত সচিব শাব্বির আহমেদের কাছে হস্তান্তর করেন।

তারা এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণ, রাজস্ব সংস্কার কমিটির সুপারিশ প্রকাশ এবং ব্যবসায়ী, নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক নেতাসহ অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ করে একটি পূর্ণাঙ্গ সংস্কার পর্যালোচনার আহ্বান জানান।

প্রতিনিধি দলের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, স্মারকলিপিতে এনবিআরের তরুণ কর্মকর্তাদের উদ্বেগ ও প্রত্যাশার বিষয় তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সরাসরি আলোচনার আহ্বান জানানো হয়েছে।

তারা বলেন, এই সপ্তাহের শুরুতে অর্থ উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক হলেও তাদের উদ্বেগের সমাধান হয়নি।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজস্ব কাঠামো গঠনে এনবিআরের তরুণ কর্মকর্তাদের দৃষ্টিভঙ্গি শোনা হোক। আমরা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সর্বোত্তম অনুশীলনের ভিত্তিতে সংস্কার চাই।’

এতে নবগঠিত রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, অধ্যাদেশটি নীতি বিভাগকে ব্যবস্থাপনার ওপর কর্তৃত্ব দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করেছে, যা প্রাতিষ্ঠানিক পৃথকীকরণের চেতনার পরিপন্থি।

পরিষদের অভিযোগ, এই অধ্যাদেশ দুটি বিভাগকে প্রশাসন ক্যাডারের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার কৌশল, যার মাধ্যমে এনবিআরের দীর্ঘদিনের কাস্টমস ও কর কর্মকর্তারা কার্যত পাশে পড়ে যাচ্ছেন।

এদিকে, গত বুধবার আগারগাঁওয়ে এনবিআর সদর দপ্তরে কাস্টমস, ভ্যাট ও কর বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দিনভর অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর কর্মকর্তারা তাদের চলমান অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন।

আন্দোলনকারী কর্মকর্তারা জানান, ২৪ মে থেকে কাস্টমস হাউস ও ভূমি কাস্টমস স্টেশন ছাড়া দেশের সব কর, কাস্টমস ও ভ্যাট অফিসে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি পালন করা হবে।

তাদের দাবি পূরণ না হলে ২৬ মে থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা বাদে এনবিআরের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিও দেন তারা।

গত এক সপ্তাহ ধরে আন্দোলনকারী কর্মকর্তারা প্রতিদিন পাঁচ ঘণ্টা করে কলম-বিরতি কর্মসূচি পালন করছিলেন।

এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় এনবিআরের আন্দোলনরত কর্মকর্তারা জানান, তারা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগকে স্বাগত জানান, তবে তাদের দাবিগুলো এতে পূরণ হয়নি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এই বিজ্ঞপ্তিতে আন্দোলনরত কর্মকর্তাদের দাবির বিষয়টি মেনে নেওয়া হয়েছে, এমন কোন ইঙ্গিত নেই বলে জানিয়েছেন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের একজন সদস্য।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অতিরিক্ত কমিশনার পদমর্যাদার ওই কর্মকর্তা বলেন, এনবিআরের ক্যাডারের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখে পৃথকীকরণের প্রশাসনিক কাঠামো কিভাবে প্রণীত হবে, তা অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে’ বলে যে কথা বলা হয়েছে তা ইতিবাচক।

কিন্তু দুইটি আলাদা বিভাগের প্রধান কে হবেন, তা নিয়ে সুষ্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। কিংবা অধ্যাদেশ স্থগিত বা বাতিলের কথাও বলা হয়নি। ফলে তারা আমাদের দাবি মেনে নিয়েছেন, তা বলা যাচ্ছে না।