বেতন গ্রেড বাড়ানোসহ ৩ দফা দাবিতে সহকারী শিক্ষকদের প্রথম দিনের পূর্ণ দিবস কর্মবিরতিতে অচল হয়ে পড়েছে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো। সোমবার (২৬ মে) কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। শিক্ষার্থীরা প্রতিদিনের মতো স্কুলে এসেছে, ক্লাসে বসেছে। কিন্তু ক্লাস নিতে যাননি কোনো শিক্ষক।
রাজধানীর একাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা যে যার মতো খেলাধুলা করছে। শিক্ষকরা অফিসরুমে বসে আছেন। কোনো ক্লাসে যাননি শিক্ষকরা। তবে মাধ্যমিক সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস হয়েছে।
শিক্ষক নেতারা জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন তারা।
এদিকে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে আন্দোলন না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সূত্রমতে, বর্তমানে দেশে ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৪ লাখ শিক্ষক কর্মরত। এর মধ্যে প্রায় ৩ লাখ ৬৫ হাজার সহকারী শিক্ষক। এসব বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে ১ কোটি ৯ লাখ ৮৫ হাজার ৮১৫ জন শিক্ষার্থী।
বর্তমানে প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে আর সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১৩তম। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন গ্রেড এক ধাপ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। নতুন এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে সহকারী শিক্ষকদের শুরুর বেতন ১২তম এবং প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড হবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এবার প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরাও কিছুটা দেরিতে পাঠ্যবই পেয়েছে। পুরোদমে ক্লাস শুরু করতে দেড় থেকে ২ মাস দেরি হয়েছে। মে মাসের শুরু থেকে কখনো এক ঘণ্টা, কখনো দুই ঘণ্টা, আবার অর্ধদিবস কর্মবিরতি করেছেন শিক্ষকরা। আগামী ৩ জুন থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত ঈদ ও গরমের ছুটি । ফলে বছরের অর্ধেক সময় পার হলেও পর্যাপ্ত ক্লাস করতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। অথচ এ বছরে সাপ্তাহিক ছুটি ও সরকারি বন্ধ বাদে মাত্র ১৭৯ দিন ক্লাস করার সুযোগ রয়েছে শিক্ষার্থীদের। এই মুহূর্তে শিক্ষকরা কর্মবিরতিতে যাওয়ায় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ শিক্ষার্থী।
বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত না করে দাবি আদায়ে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের দাবির বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে আমরা বসলেও ফলপ্রসূ কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি। ফলে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আমরা পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন করছি। সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিলে আমরা ক্লাসরুমে ফিরে যাব।’
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান বলেন, ‘শিক্ষকদের প্রথম দাবি ১১তম গ্রেডে বেতন। যদিও কনসালট্যান্ট কমিটি ১২তম গ্রেডের কথা বলেছে। আমরা দুটি প্রস্তাবই মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। তবে এতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতির প্রয়োজন, এটা শিক্ষকদের বুঝতে হবে। এ ছাড়া তারা যে দুটি উচ্চতর গ্রেডের কথা বলেছেন, তা নিয়েও আমরা কাজ করছি। তবে শতভাগ পদোন্নতির যে দাবি করেছেন, সেটা সচিব কমিটিতে ৮০ শতাংশ করা হয়েছে।’
শিক্ষকদের দাবিগুলো হলো-
১. প্রাথমিক শিক্ষাসংক্রান্ত কনসালটেশন কমিটির সুপারিশের যৌক্তিক সংস্কার করে সহকারী শিক্ষক পদকে এন্ট্রি পদ ধরে ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ।
২. ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন।
৩. প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতিসহ দ্রুত পদোন্নতি প্রদান।