মেক্সিকো নয়, মুশফিকুল ফজল আনসারীকে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে দেখতে চান এক আমেরিকান কূটনীতিক। দেশের ২৮তম পররাষ্ট্র সচিব হতে যাচ্ছেন ওয়াশিংটনে দায়িত্বরত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসাদ আলম সিয়াম।
এরই মধ্যে তার নিয়োগের ফাইল অনুমোদন করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আসাদ আলমের নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি না হলেও তাকে অনতিবিলম্ব ওয়াশিংটন মিশনের দায়িত্ব ত্যাগ করে দেশে ফেরার অফিস আদেশ দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অনুবিভাগ।
মহাপরিচালক (প্রশাসন) আবুল হাসান মৃধা স্বাক্ষরিত অফিস আদেশের সূত্র ধরে দেশি-বিদেশি সংবাদ মাধ্যমে বাংলাদেশের পরবর্তী পররাষ্ট্র সচিব সিয়ামকে নিয়ে রিপোর্ট হয়েছে। সেসব রিপোর্টের প্রেক্ষিতে দ্রুততম সময়ের মধ্য যুক্তরাষ্ট্রে পরবর্তী রাষ্ট্রদূত নিয়োগের তাগিদ আসছে বিভিন্ন মহল থেকে।
ঢাকায় দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করে যাওয়া বাংলাদেশের বন্ধু আমেরিকান কূটনীতিক জন ড্যানিলোভিচও এমন তাগিদ অনুভব করছেন। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে প্রতিষ্ঠিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক্স হ্যান্ডেলে দেওয়া তার সংক্ষিপ্ত বার্তায়।
বহু বছর আগে বাংলাদেশে চাকরি করে যাওয়া আমেরিকা সরকারের অবসরপ্রাপ্ত ওই কর্মকর্তা সাউথ এশিয়া নিয়ে লেখালেখিতে খুবই সরব। ওয়াশিংটনভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতি-বিষয়ক ম্যাগাজিন সাউথ এশিয়ান পার্সপেক্টিভ-এর নির্বাহী সম্পাদক তিনি।
জন তার বার্তায় বলেন, পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে আম্বাসেডর সিয়ামের নিয়োগের সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের একজন নতুন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ জরুরি। আর এর একটি সুন্দর সমাধান হতে পারে মেক্সিকোতে দায়িত্বরত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারীকে ওয়াশিংটনে স্থানান্তর করা। ওয়াশিংটন তথা যুক্তরাষ্ট্রে তিনি সুপরিচিত এবং সম্মানিত ব্যক্তি।
বিশ্বকোষ বলছে, মুশফিক ফজল আনসারী নামে পরিচিত বাংলাদেশি ওই সাংবাদিক সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় বর্তমানে মেক্সিকো সিটিতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর, হোয়াইট হাউস এবং জাতিসংঘের প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রশ্ন করার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত তিনি।
মুশফিকুল ফজল আনসারীর মতো স্মার্ট রাষ্ট্রদূতকে ওয়াশিংটনে পাঠানোর দাবি ক্রমশই জোরালো হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেটিজেনরা ওয়াশিংটনে পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে তাকে নিয়োগের অনুরোধ করছেন ইউনূস সরকারের প্রতি।
কে এই জন ড্যানিলোভিচ?
নতুন প্রজন্মের অনেকে হয়তো জন ড্যানিলোভিচ সস্পর্কে না জেনে থাকতে পারেন। ঢাকায় এটা প্রতিষ্ঠিত যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ সম্পর্ক আজকের পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার ক্ষেত্রে যেসব দূতের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ তার অন্যতম ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অফ মিশন হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাওয়া জন এফ ড্যানিলোভিচ।
তিনি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। নিউ ইংল্যান্ডের ডিপ্লোম্যাট ইন রেসিডেন্স হিসেবে কূটনৈতিক সেবায় কলেজ ছাত্রদের জন্য ক্যারিয়ার পরামর্শ প্রদানকারী জন দক্ষিণ সুদানে মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ছিলেন।
এ ছাড়াও তিনি পাকিস্তানের পেশোয়ারে মার্কিন কনসাল জেনারেল ছিলেন।
বাংলাদেশে তার তৎকালীন দায়িত্ব পালনের সময় জন রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং সবার দৃষ্টি সর্বদা তার ওপর নিবদ্ধ ছিল। তিনি সাবলীল বাংলা বলতে পারেন। জনের বড় পরিচয় তিনি শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের কট্টর বিরোধী।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে একতরফা (আমি আর ডামি) নির্বাচনে জয়ের পর অভিনন্দন জানানোর জন্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনেরও সমালোচনা করেছিলেন এই জন। হাসিনার পতন ও পলায়নের পর তিনি কিছু পরামর্শ দিয়েছিলেন।
এর মধ্যে ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা এবং ফখরুদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো সময়সীমা নির্ধারণ না করা, বিশেষ করে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য, যা তিনি সাউথ এশিয়া পার্সপেক্টিভস-এ উল্লেখ করেছিলেন। হাসিনাকে সমর্থন করার জন্য তিনি ভারতেরও সমালোচনা করেন।
আপনার মতামত লিখুন :