দীর্ঘ ১১৭ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় ভল্টে সংরক্ষিত ঢাকা নবাব পরিবারের ঐতিহাসিক হীরকখণ্ড ‘দরিয়া-ই-নূর’-এর বাক্স আনুষ্ঠানিকভাবে খুলতে যাচ্ছে সরকার।
নবাব সলিমুল্লাহ বাহাদুরের পরিবার ব্রিটিশ আমলে আর্থিক সংকটে পড়ে এই মূল্যবান হীরা ও অন্যান্য অলঙ্কার বন্ধক দিয়েছিল সরকারের কাছে। তবে ঋণ শোধ করতে না পারায় রত্নগুলো রাষ্ট্রীয় মালিকানায় চলে যায় এবং এরপর থেকেই সেগুলো সরকারি ভল্টে সংরক্ষিত রয়েছে।
সরকারি নথি অনুযায়ী, ১৯০৮ সালের ৬ আগস্ট নবাব সলিমুল্লাহ এবং তৎকালীন পূর্ববঙ্গ ও আসাম সরকারের মধ্যে একটি বন্ধক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
এর আওতায় নবাব পরিবার ‘দরিয়া-ই-নূর’-সহ মূল্যবান অলংকার সরকারকে অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে জমা দেয় এবং বিনিময়ে ৩ শতাংশ সুদে ১৪ লাখ রুপি ঋণ নেয়, যেটি ৩০ বছরের মধ্যে পরিশোধের শর্তে ছিল।
তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ না হওয়ায় রত্নগুলো রাষ্ট্রীয় হেফাজতে চলে যায় এবং ‘কোর্ট অব ওয়ার্ডস’-এর সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়।
বর্তমানে এসব রত্নরাজি রাজধানীর সোনালী ব্যাংকের একটি সুরক্ষিত ভল্টে সংরক্ষিত রয়েছে, যার তত্ত্বাবধানে রয়েছে ভূমি সংস্কার বোর্ড।
নতুন সরকারি উদ্যোগ
সরকারি সূত্র জানায়, এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে এই ভল্ট আর কখনো খোলা হয়নি। মাঝেমধ্যে কমিটি গঠিত হলেও কেউ কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি।
এবার সরকার নতুন করে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করেছে, যার সভাপতিত্ব করছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিনিধি, মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র, ভূমি, আইন ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর, জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক, সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, একজন রত্ন বিশেষজ্ঞ এবং ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান।
কমিটি সংশ্লিষ্ট ভল্ট খুলে অলংকারগুলোর প্রকৃত অবস্থা, পরিমাণ ও মূল্য যাচাই করে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রস্তুত করবে।
এরপর আইনি পরামর্শের ভিত্তিতে রত্নগুলোর সংরক্ষণ, প্রদর্শনী কিংবা জাদুঘরে স্থানান্তরসহ ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই উদ্যোগ শুধু একটি প্রাচীন সম্পদ পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা নয়, বরং বাংলাদেশের ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও আর্থিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের দিকেও এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :