বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে দেশজুড়ে ঝরছে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি। উপকূলীয় এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাতসহ ঝোড়ো হাওয়া বইছে। নিম্নচাপে উপকূল অতিক্রম করার সময় দেশের ১৪ জেলায় ২ থেকে ৪ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সন্ধ্যায় আবহাওয়ার ভারী বৃষ্টিপাতের ৪৮ ঘণ্টার সতর্কবার্তায় দেশের ৮ বিভাগে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি চলমান থাকবে বলে জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে পাঁচ জেলায় কোথাও কোথাও ভূমিধ্বসের শঙ্কাও রয়েছে।
এতে বলা হয়, সাগরদ্বীপ ও খেপুপাড়ার মধ্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রমরত গভীর নিম্নচাপটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করেছে।
গভীর নিম্নচাপটি বর্তমানে সাতক্ষীরা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় স্থল গভীর নিম্নচাপ আকারে অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর অথবা উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে পারে।
সতর্কবার্তায় আরও বলা হয়, নিম্নচাপের প্রভাবে বৃহস্পতিবার রাত ৭টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ এবং পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অনেক জায়গায় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
অতি ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন ও কক্সবাজার জেলার পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধ্বসের শঙ্কা রয়েছে।
সেইসঙ্গে ভারী বর্ষণ জনিত কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর কোথাও কোথাও অস্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে।
এদিকে সাতক্ষীরা অঞ্চলে স্থলভাগে উঠে এসেছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ। বৃহস্পতিবার রাতে এটি উপকূল অতিক্রম করে স্থল গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে।
এর প্রভাবে দেশের উপকূলীয় জেলা ও সমুদ্র বন্দরগুলোতে ঝোড়ো হাওয়া, ভারী বর্ষণ ও জলোচ্ছ্বাস দেখা দিতে পারে।
আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা জানিয়েছেন, নিম্নচাপটি বর্তমানে সাতক্ষীরা ও আশেপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। এটি উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে যাবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তাল রয়েছে উত্তর বঙ্গোপসাগর। ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে উপকূলীয় জেলা ও সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
অমাবস্যা ও নিম্নচাপের যুগপৎ প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, খুলনাসহ ১৪ জেলায় ২ থেকে ৪ ফুট উচ্চতার বায়ু-চালিত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কাও রয়েছে। দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
বৈরী আবহাওয়ার কারণে বরিশাল নদী বন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ সব লঞ্চ চলাচল সাময়িক বন্ধ করে দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটেও লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক আছে বলে নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী শনিবার থেকে বৃষ্টির প্রবণতা কিছুটা কমে আসতে পারে। তবে সারা দেশেই তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :