২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা।
এর আগে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজেট ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। বর্তমান বাজেট চলতি বাজেটের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। এবারই প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার কমছে।
ঘোষিত বাজেট সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অর্থনৈতিক সংগঠন। অনেকে মনে করছেন বাজেট আশাব্যঞ্জক নয়। কেউ বলছেন, বাজেটে কালো টাকা সাদা করার বিধান সংস্কারের সম্পূর্ণ বিপরীত। বাজেটে অমানবিক বৈষম্য বিলোপে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই বলেও অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ।
বাজেটে মৌলিক পরিবর্তন দেখছে না বিএনপি
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের আকার আরও ছোট হওয়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। সোমবার বিকেলে বনানীর হোটেল সারিনায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেট আগের সরকারের ধারাবাহিকতা এবং এর মৌলিক বিষয়গুলোতে গলদ রয়েছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘গুণগত দিক থেকে এই বাজেটে কোনো কিছু পরিবর্তন দেখিনি। শুধু সংখ্যার সামান্য….কিন্তু ওই প্রিন্সিপাল তো একই রয়ে গেছে, কাঠামো একই রয়ে গেছে, সুতরাং এটা আগামী দিনের সরকারের জন্য খুব একটা সহজ কিছু হবে না।’
গতানুগতিক বলছে জামায়াত
বাজেটকে আগের বাজেটগুলোর মতো একটি গতানুগতিক বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম। তিনি বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী প্রথম বাজেটে নতুন বাংলাদেশ পুনর্গঠনের প্রত্যয় আশানুরূপভাবে প্রতিফলিত হয়নি। বাজেটে বিদেশ নির্ভরতা কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।’
সোমবার বাজেট নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘এই বাজেটে বড় অংকের ব্যয় মেটাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। গত অর্থবছরেও এর কাছাকাছি অর্জন করা সম্ভব হয়নি, যা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ বলে আমরা মনে করছি।’
বাজেটে বিদেশ নির্ভরতার আশঙ্কা সিপিবির
বাজেটে মন্দা, বেকারত্ব ও বিদেশ নির্ভরতার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স এক বিবৃতিতে এ প্রতিক্রিয়া জানান।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, ‘এবারের বাজটের প্রত্যাশা ছিল- লুটপাটকারীদের টাকা, পাচারকারীদের টাকা, ঋণখেলাপি ও কালো টাকার মালিকদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধার করে বাজেটের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও দারিদ্র বিমোচনে অন্তবর্তীকালীন সরকার বিশাল পরিমাণ ব্যয় বরাদ্দে স্বচেষ্ট হবে। বৈষম্য কমিয়ে আনার জন্য অতি ধনীদের কাছ থেকে সম্পদ কর আদায় করে বাজেটকে আরও বৈষম্যবিরোধী ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ নির্ভর করা হবে। কিন্তু এদিক দিয়ে সুদের বোঝা ও রাজস্ব তোলায় ব্যর্থতার জন্য বাজেট তা করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এখন মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে এবং টাকার মান কিছুটা স্থির করতে সরকার সক্ষম হয়েছে বটে, তবে এই বাজেটে সেটা নিশ্চিত করতে গিয়ে মন্দা বেকারত্ব বিদেশ নির্ভরতার বিপদ ডেকে আনার সমূহ আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।’
বৈষম্য বিলোপে উদ্যোগ দেখছে না বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। সোমবার সন্ধ্যায় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।
প্রতিক্রিয়ায় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেটে দেশে সীমাহীন অমানবিক বৈষম্য বিলোপে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। অর্থনীতির মন্থর গতি ও স্থবিরতা কাটিয়ে উঠতে অর্থ উপদেষ্টার আশাব্যঞ্জক প্রস্তাবনা দেখা যাচ্ছে না।
বাজেটকে ‘স্বপ্নহীন যাত্রার নৈরাশ্যজনক বয়ান’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তিনি।
কালো টাকা সাদা করার বিধান সংস্কারের বিপরীত মনে করছে টিআইবি
বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি অন্তর্বর্তী সরকারের এ উদ্যোগের কড়া সমালোচনা করে বলেছে, বিষয়টিকে রাষ্ট্রীয় সংস্কার, বিশেষ করে দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যের সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছে সরকার। এ সিদ্ধান্ত একই সঙ্গে অনৈতিক, বৈষম্যমূলক ও সংবিধান পরিপন্থি।’
বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় এক বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বৈষম্যমূলক। কারণ এই সিদ্ধান্তের ফলে আবাসন খাতে অবৈধ অর্থের মালিকদের অধিকতর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে। সৎ উপার্জনকারীদের ফ্ল্যাট বা ভবনের অংশীদার হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করবে।’
বাজেট ততটা আশাব্যঞ্জক মনে করছে না ডিসিসিআই
ব্যবসা ও বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে বাজেট ততটা আশাব্যঞ্জক নয় বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ।
প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের ওপর ডিসিসিআই’র তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, নূন্যতম করের সমন্বয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনুমোদন যোগ্য বিয়োজনের আওতা বৃদ্ধি, করজাল সম্প্রসারণ এবং অটোমেটেড রিটার্ন ব্যবস্থা চালুর মতো ইতিবাচক পদক্ষেপ থাকা সত্ত্বেও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, সহজে ব্যবসা পরিচালনার পরিবেশ উন্নয়ন, সিএমএসএমই এবং ব্যাংকিং খাত সংস্কার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না থাকায় সার্বিক ব্যবসা ও বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে ততটা সহায়ক নয়। অনেক ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের অনুপস্থিতির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যিক কার্যক্রম বেশ চাপের মধ্যে থাকার আশঙ্কা রয়েছে।’
শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কৃষিতে বরাদ্দ কমানো উদ্বেগজনক বলছে সিপিডি
প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বরাদ্দ কমানো উদ্বেগজনক মনে করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সোমবার সিপিডি কার্যালয়ে আয়োজিত তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘বাজেটের যে কাঠামো উপস্থাপন করা হয়েছে, সেখানে বাজেটের আকার সামান্য ছোট করা হয়েছে। পাশাপাশি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি, সেখানেও কিছুটা কাটছাঁট করা হয়েছে। বাজেটের আকার নিয়ে অনেকদিন ধরে আলোচনা হয়েছে, সেটার অন্যতম কারণ হচ্ছে যে, আমাদের যে চলমান অর্থনৈতিক সংকট, অর্থাৎ উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ স্থবিরতা, কর্মসংস্থানে সমস্যা এবং রাজস্ব আহরণের সমস্যা বিবেচনায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা বাজেট প্রস্তাব করেছে বলে আমাদের মনে হয়েছে।’
আপনার মতামত লিখুন :