পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পর এবার তার ভাগনি ও যুক্তরাজ্যের এমপি টিউলিপ সিদ্দিককে আবারও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের কাছ থেকে ‘ঘুষ’ হিসেবে ফ্ল্যাট নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার জন্য আগামী ২২ জুন সকাল ১০টায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হওয়ার জন্য টিউলিপ সিদ্দিককে অনুরোধ করা হয়েছে।
রোববার (১৫ জুন) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো এ-সংক্রান্ত তলবি নোটিশ সরাসরি ঢাকার পাঁচটি ঠিকানা এবং দুটি থানার মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
এর আগে গত ১৪ মে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে তলব করে চিঠি দেন তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন।
ওই সময় পৃথক নোটিশে একই মামলার অপর আসামি রাজউকের সাবেক সহকারী আইন উপদেষ্টা শাহ খসরুজ্জামান ও সর্দার মোশাররফ হোসেনকেও তলব করা হয়। তবে, দুদকের ডাকে সাড়া দেননি টিউলিপসহ অন্যরা।
এবারের তলবি নোটিশ মোহাম্মদপুরের জনতা হাউজিং সোসাইটি, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, গুলশান-১ ও ২ এলাকার আবাসিক ঠিকানায় সরাসরি পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি গুলশান থানা ও ধানমন্ডি থানার মাধ্যমেও নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
জানা যায়, ঢাকার গুলশানের একটি প্লট ‘অবৈধভাবে হস্তান্তরের ব্যবস্থা’ করিয়ে দিয়ে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের কাছ থেকে ‘ঘুষ’ হিসেবে একটি ফ্ল্যাট নেওয়ার অভিযোগে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে গত ১৫ এপ্রিল মামলা করে সংস্থাটি।
দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে টিউলিপ সিদ্দিকসহ রাজউকের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করেন সংস্থার সহকারী পরিচালক মনিরুল ইসলাম। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- রাজউকের সাবেক সহকারী আইন উপদেষ্টা শাহ মো. খসরুজ্জামান ও সর্দার মোশারফ হোসেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ১৯৬৩ সালে তৎকালীন বিচারপতি ইমাম হোসেন চৌধুরী গুলশানে এক বিঘা ১৯ কাঠা ১৩ ছটাক আয়তনের একটি প্লট বরাদ্দ পান। সরকারি ইজারা চুক্তি অনুযায়ী, ৯৯ বছরের মধ্যে ওই প্লট হস্তান্তর বা ভাগ করে বিক্রি করা নিষিদ্ধ ছিল।
তবে, ১৯৭৩ সালে তিনি মো. মজিবুর রহমান ভূঁইয়াকে আমমোক্তার মাধ্যমে প্লটটি হস্তান্তর করেন। এরপর প্লটটি ভাগ করে বিক্রি করা হয় এবং ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলামের মাধ্যমে ভবন নির্মাণ শুরু হয়।
জহুরুল ইসলামের মৃত্যুর পর তার সন্তানদের মধ্যে বিরোধ শুরু হলে মামলা হয়। মামলার চলমান অবস্থায় এবং হস্তান্তর নিষিদ্ধ থাকা অবস্থায় রাজউকের সংশ্লিষ্ট আইন উপদেষ্টারা ইস্টার্ন হাউজিংকে ফ্ল্যাট হস্তান্তরের অনুমোদন দেয়, যা ছিল সম্পূর্ণ অবৈধ।
কারণ, কোম্পানিটি লিজ হোল্ডার বা বৈধ প্রতিনিধি ছিল না। রাজউকের রেকর্ড অনুযায়ী, ৯৯ বছরের ইজারার শর্তে নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে প্লট হস্তান্তর করার সুযোগ নেই। তবুও ইস্টার্ন হাউজিংকে আমমোক্তার করে ওই প্লট ভাগ করে ৩৬টি ফ্ল্যাট নির্মাণ ও হস্তান্তরের অনুমোদন দেওয়া হয়।
এজাহারে আরও অভিযোগ করা হয়, ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে ‘অবৈধভাবে’ হস্তান্তরের ব্যবস্থা করা এবং এর বিনিময়ে টিউলিপ সিদ্দিককে ‘অবৈধ পারিতোষিক’ হিসেবে ইস্টার্ন হাউজিং থেকে বিনামূল্যে একটি ফ্ল্যাট প্রদান করা হয়।
এজাহারে অবৈধভাবে প্রভাবিত করে ইস্টার্ন হাউজিংকে আমমোক্তার অনুমোদনপূর্বক ও ফ্ল্যাট বিক্রয়ের অনুমোদন করিয়ে অবৈধ সুবিধা দিয়ে এবং নিজে অবৈধ সুবিধা নিয়ে বিনামূল্যে একটি ফ্ল্যাট গ্রহণ করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে দাবি করা হয়।
আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১২০বি/৪০৯/১৬১/১৬২/১৬৩/১৬৪/১৬৫(ক)/১০৯ ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়।
জানা যায়, দুদকের উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলামের নেতৃত্ব সাত সদস্যদের একটি দল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে আনীত বিভিন্ন অভিযোগ অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন করছেন।
এর আগে পূর্বাচলে প্লট দুর্নীতির এক মামলায় সহযোগী আসামি হিসেবে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
গত ১০ মার্চ পূর্বাচলে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দ নেওয়ার প্রমাণ পাওয়ায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার পরিবারে সদস্য, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন এবং জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৃথক ছয়টি অভিযোগপত্র বা চার্জশিট দিয়েছে সংস্থাটি।
যা আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। ছয়টি মামলার মধ্যে একমাত্র টিউলিপ প্লট না নিয়েও আসামি হয়েছেন।

 
                             
                                    




 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                    -20251031160223.webp) 
                                                                                     
                             
        
        
        
       -20251101005633.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন