সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালকে গ্রেপ্তারের জন্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জোরদার অভিযান চালাচ্ছে। তবে তাকে আটকের খবর ডিবি এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা উভয় পক্ষ থেকেই অস্বীকার করা হয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে আউয়াল লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিলেন। এমন প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন মহলের প্রশ্ন তাহলে হাবিবুল আওয়াল কোথায় লুকিয়ে আছেন?
সোমবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) সাংবাদিকদের বলেন, কাজী হাবিবুল আউয়ালকে এখনো আটক করা হয়নি। তাকে আটকের যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা সঠিক নয়।
এর আগে রোববার রাতে পুলিশ সদর দপ্তরের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আউয়ালকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে আনা হচ্ছে বলে জানালেও, ডিবি তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি অস্বীকার করে।
ডিবির অভিযান ও মনিরুল মাওলা আটক
ডিবির যুগ্ম কমিশনার নাসিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, তারা কাজী হাবিবুল আউয়ালকে আইনের আওতায় আনতে জোরালো তৎপরতা চালাচ্ছেন। রোববার রাতে তাকে ধরতে দুই দফায় অভিযান চালানো হয়।
প্রথমে বসুন্ধরা এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে জানা যায়, তিনি কিছুক্ষণ আগেই ওই বাসা ত্যাগ করেছেন। পরে আরেকটি এলাকায় তার অবস্থানের তথ্য পেয়ে সেখানেও অভিযান চালানো হয়, কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি।
যুগ্ম কমিশনার আরও জানান, রোববার রাতে বসুন্ধরা এলাকায় আরেকটি অভিযানে ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মনিরুল মাওলাকে আটক করা হয়েছে।
যেহেতু একই এলাকায় আউয়ালকে ধরতে অভিযান চালানো হয়, অনেকেই মনে করেছিলেন আউয়ালকেও আটক করা হয়েছে।
তবে ডিবি নিশ্চিত করেছে, আউয়ালকে ধরতে তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে এবং যখনই তাকে পাওয়া যাবে, তখনই আটক করা হবে।
আউয়াল ও নূরুল হুদার কমিশন নিয়ে বিতর্ক
কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করে, যা ‘আমি-ডামি ভোট’ উপাধি পেয়েছিল এবং ব্যাপক বিতর্কিত ছিল।
বিশেষ করে ভোটের হার নিয়ে বড় ধরনের বিতর্ক তৈরি হয়, যেখানে ভোটের দিন বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৭.১৫% ভোট পড়ার কথা জানানো হলেও এক ঘণ্টার ব্যবধানে ভোটের হার ৪০% বলে উল্লেখ করা হয়।
সিইসি আউয়াল প্রথমে ২৮% ভোট পড়ার কথা বলে পরে তা সংশোধন করে ৪০% বলেন। এ ছাড়াও বিএনপিকে নির্বাচনে আনা হবে কি না- এমন প্রশ্নে তার কিছু নেতিবাচক বক্তব্য সমালোচিত হয়।
উল্লেখ্য, সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদার কমিশন ২০১৮ সালের ‘দিনের ভোট রাতে’ সম্পন্ন করার জন্য আলোচিত ছিল। রোববার সন্ধ্যায় নূরুল হুদাকে গ্রেপ্তারের পর আউয়ালের নাম আলোচনায় আসে।
মামলার জেরে সাবেক সিইসিরা
আওয়ামী লীগ আমলে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে অনিয়ম-কারচুপির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশন সদস্যদের আসামি করে রোববার মামলা করেছে বিএনপি।
মামলায় মোট ২৪ জনকে আসামি করা হয়েছে, যার মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এবং পুলিশের সাবেক চারজন আইজিও রয়েছেন।
রাজধানীর শেরেবাংলানগর থানায় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. সালাহউদ্দিন খান বাদী হয়ে এ মামলা করেন। এই মামলায় সোমবার কে এম নূরুল হুদার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
নূরুল হুদা এবং হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন ছাড়াও কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ ও তার নেতৃত্বাধীন কমিশন সদস্যদেরও এই মামলায় আসামি করা হয়েছে।