ঢাকা শুক্রবার, ২৭ জুন, ২০২৫

চাইলেই ১৫ বছরে অবসর নিতে পারবেন সরকারি চাকরিজীবীরা!

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০২৫, ১০:৪৮ এএম
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় । প্রতীকী ছবি

সরকারি চাকরিতে ১৫ বছর পূর্ণ করলেই এখন থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ সংক্রান্ত সুপারিশ বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। জনপ্রশাসন সংস্কারের অংশ হিসেবে গঠিত ড. আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

গত ১৮ জুন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়ার সভাপতিত্বে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকের ভিত্তিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

তবে বিষয়টি নিয়ে দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা নাম প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, ফ্যাসিস্ট সরকারের গত ১৫ বছরে তিনটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। তাদের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন জেলার পুলিশ সুপারসহ (এসপি) নির্বাচনকালীন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা।

বিতর্কিত এই তিন নির্বাচনে বিশেষ ভূমিকা রাখা যেসব কর্মকর্তার চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর হয়েছে, তাদের বেশির ভাগকেই বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। যাদের চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর হয়নি, তাদের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে।

সরকার তাদের বসিয়ে বেতন দিচ্ছে। এ ধরনের কর্মকর্তাদের অবসরে পাঠাতেই মূলত মুয়ীদ কমিশনের এই সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে।

জানা গেছে, গত ১৮ জুনের ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ৯.৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে-‘সিভিল সার্ভিস অ্যাক্ট, ২০১৮-এর ৪৫ ধারা সংশোধনক্রমে কোনো সরকারি কর্মচারীর ২৫ বছর চাকরিকাল পূর্তিতে তাকে সরকার কর্তৃক বাধ্যতামূলক অবসর প্রদানের বিধান বাতিল করার জন্য সুপারিশ করা হলো।

তবে বিধান রাখা যায় যে, কোনো সরকারি কর্মচারী ১৫ বছর চাকরি পূর্তিতে অবসর নিতে আবেদন করলে সরকার তা মঞ্জুর করতে পারবে।’

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ১৫ বছর পূর্তিতে স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়ার কমিশনের সেই সুপারিশ বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। এসব বিষয়ে যেকোনো সময় পরিপত্র জারি করতে পারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

বর্তমানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ২৫ বছর চাকরি করলে পেনশন-সুবিধাসহ স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। আবার সরকার ইচ্ছা করলে কাউকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাতে পারে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্যে অক্টোবরে প্রথম ধাপে রাষ্ট্রের ছয়টি খাত সংস্কারে কমিশন গঠন করে সরকার।

এর মধ্যে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ সংস্কার ও দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক সংস্কার কমিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদন ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কাছে দেওয়া হয়। ৫ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী।

প্রথমে ১৫ বছর চাকরি করার পর সব সুবিধাসহ অবসরের অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন থেকে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা ওএসডি না করার সুপারিশ করা হয়।

বলা হয়, কোনো ওএসডি কর্মকর্তাকে কাজ না দিয়ে বেতন-ভাতা দেওয়ার পরিবর্তে তাদের জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে শিক্ষকতা বা প্রশিক্ষণকেন্দ্রে সাময়িকভাবে পদায়ন করা যেতে পারে। দেশের মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া ইনডেক্স বিশ্লেষণ করে মূল বেতন প্রতিবছর বৃদ্ধি করা যেতে পারে। তবে তা ৫ শতাংশের বেশি হবে না।

এ উদ্দেশ্যে একটি স্থায়ী বেতন কমিশন গঠন করা যেতে পারে। বর্তমানে উপসচিবদের গাড়ি কেনা ঋণ এবং গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এ সুযোগ সচিবালয়ের বাইরে অন্যান্য সার্ভিসের কর্মকর্তাদের জন্য নেই।

এ ব্যবস্থা বাতিল করার সুপারিশ করা হয়। এতে বৈষম্য দূর হবে এবং সরকারের ব্যয় কমবে। এ ছাড়া শূন্য পদ ছাড়া পদোন্নতি না দেওয়া, প্রশাসনিক ন্যায়পাল নিয়োগ করা, মন্ত্রণালয়ের সংখ্যা কমানোসহ আরো বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়।

এগুলোর মধ্যে  জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের ৯.৩ অনুচ্ছেদ সুপারিশ অনুযায়ী ১৫ বছর পূর্তিতে স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়ার সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।