২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যাত্রাবাড়ীতে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তথ্য উঠে এসেছে বিবিসির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে। এতে দাবি করা হয়েছে, ওই দিন পুলিশের গুলিতে অন্তত ৫২ জন মানুষ নিহত হন, যাদের মধ্যে বহু তরুণ-শিশুও ছিল। বিবিসির অনুসন্ধান বলছে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এ গুলির নির্দেশ দিয়েছিলেন।
বিবিসির ‘আই’ ইনভেস্টিগেশন টিম বুধবার (৯ জুলাই) এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, ৫ আগস্ট দুপুরে যখন বিক্ষোভকারীরা যাত্রাবাড়ী থানার সামনে অবস্থান করছিলেন তখন হঠাৎ সেনা সদস্যরা পিছু হটে যান। এরপর থানার ভেতর থেকে পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ শুরু করে এবং তা চলে প্রায় আধাঘণ্টা। এতে ঘটনাস্থলে বহু মানুষ নিহত ও আহত হন।
প্রতিবেদনে উঠে আসে, নিহত মিরাজ হোসেন নামের এক আন্দোলনকারী মোবাইলে এই ঘটনার ভিডিও ধারণ করছিলেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর আগে তার ক্যামেরায় ধরা পড়ে সেই নির্মমতা। তার পরিবার ফোনটি উদ্ধার করে সাংবাদিকদের দেয়।
একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য অনুসারে, গুলির সময় বিক্ষোভকারীরা জীবন বাঁচাতে ছোট ছোট গলির দিকে ছুটে যাচ্ছিলেন। আহতদের কেউ কেউ রিকশা-ভ্যানে করে সরিয়ে নিচ্ছিলেন। ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশের পক্ষ থেকে তখনো আহতদের ওপর লাঠিচার্জ চলছিল।
ভুল ভিডিও নিয়ে বিভ্রান্তি
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত একটি ভাইরাল ভিডিও শুরুতে ৫ আগস্টের বলে ধারণা করা হলেও বিবিসির বিশ্লেষণে দেখা যায় সেটি ৪ আগস্টের। বিবিসি গাড়ির রং, রাস্তার গঠন ও সময়ে মিলিয়ে নিশ্চিত করে যে, মূল হত্যাকাণ্ড ঘটে ৫ আগস্ট।
বিক্ষোভ ও পালিয়ে যাওয়া
শুধু যাত্রাবাড়ী নয়, সেইদিন দেশের বিভিন্ন এলাকায়ও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা শহরের শাহবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ আরও তীব্র হয়। অবশেষে টানা ৩৬ দিনের আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান।
পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ভূমিকা
বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ পুলিশের একজন মুখপাত্র ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের সময় কিছু পুলিশ সদস্য অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছেন, যা অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক।’
যাত্রাবাড়ী থানার তৎকালীন ওসি আবুল হাসানসহ পুলিশের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। সেনাবাহিনীর ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চেয়ে বিবিসি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
নিহত ও আহতের সংখ্যা
প্রথমদিকে নিহতের সংখ্যা ৩০ বলে জানানো হলেও বিবিসি নিহতের পরিবার, হাসপাতালের নথি এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত করেছে যে, অন্তত ৫২ জন সেদিন প্রাণ হারান। আহতদের অনেকে এখনো হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।