‘স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে গিয়ে আমার মৃত্যু হলে খুনি হাসিনার পতন না হওয়া পর্যন্ত তোমরা আমার লাশ ঘরে আনবে না।’- মৃত্যুর আগে কথাগুলো বলেছিলেন, টঙ্গি সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ফাহমিন জাফর।
গত বছরের (১৮ জুলাই), রাজধানীর উত্তরায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নিয়ে পুলিশের ছররা গুলিতে গুরুতর আহত হন ফাহমিন। বন্ধুরা তাকে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
নওগাঁর আত্রাই উপজেলার তারাটিয়া গ্রামের বাসিন্দা ফাহমিন জাফর জন্মেছিলেন ২০০৬ সালে। মা-বাবার চার সন্তানের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন তিনি। বুয়েটে ভর্তি হয়ে প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। সেই স্বপ্ন নিয়ে রাজধানীতে মামার বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করছিলেন ফাহমিন।
তার মা শিল্পী বানু কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘সেই জুলাই মাসেই আমার বুকের মানিককে আমার কোল খালি করে রক্তপিপাসা মিটিয়েছে খুনি হাসিনা।’
তিনি আরও বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে ছুটে যাওয়ার পথে পুলিশের সদস্যরা তাকে বারবার বাধা দেয় এবং অশালীন আচরণ করে। হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার বাবুটা আর নেই।’
শিল্পী বানু বলেন, চিকিৎসক আমাদের দ্রুত লাশ নিয়ে চলে আসতে বলেন। ‘দ্রুত লাশ না আনা হলে পুলিশ লাশ গায়েব করে দিত।’ আমার কানে আজও সেই কথা এখনো বাজে।’
বাবার সঙ্গে শেষ কথা
ফাহমিনের বাবা শেখ আবু জাফর বলেন, ‘সকাল ১০টায় ছেলের সঙ্গে শেষ কথা হয়। জিজ্ঞাসা করেছিলাম কোথায় আছিস, বলেছিল আন্দোলনে। আমি বলেছিলাম, তাড়াতাড়ি বাড়ি আয়। ফিরল ঠিকই, তবে লাশ হয়ে…।’
ফাহমিনের ফোনের শেষ কল ছিল বাবার নম্বরে। আহত হওয়ার পর কেউ একজন সেখান থেকে ফোন করে জানান, ‘ফাহমিন এক্সিডেন্ট করেছে, দ্রুত হাসপাতালে আসুন।’
খবর পেয়ে তার মা এবং মামা উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে পৌঁছে যান। সেখানে ছেলের নিথর দেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা।
সেই রাতেই ফাহমিনের লাশ নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের বাড়ি নওগাঁর আত্রাইয়ের তারাটিয়ায়। পরে (১৯ জুলাই) শুক্রবার, বাদ জুমা পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
আপনার মতামত লিখুন :