দেশজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারির সময় আলোচনা, গবেষণা, স্বাস্থ্যসেবা ও টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ্য করা গেলেও, প্রতি বছর বাড়তে থাকা ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখনো কার্যকর কোনো সমন্বিত উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। অথচ পরিসংখ্যান বলছে, করোনাভাইরাসের তুলনায় ডেঙ্গু এখন আরও ভয়াবহ এবং প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিন বছরে দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা করোনাভাইরাসের তুলনায় যথাক্রমে তিনগুণ ও প্রায় দ্বিগুণ। কিন্তু এর পরও ডেঙ্গু প্রতিরোধে নেই কার্যকর ভ্যাকসিন, নেই দীর্ঘমেয়াদি নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা।
তিন বছরে ডেঙ্গু বনাম করোনা
২০২২ সালে করোনাভাইরাসে দেশে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৬৮ জনের মৃত্যু হয়। এ বছরে মৃত্যুহার গড়ে প্রায় ০.৯ শতাংশ ছিল।
অন্যদিকে, ২০২২ সালেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় প্রায় ৬২ হাজার ৩৮২ জন। এর মধ্যে ২৮১ জনের মৃত্যু হয়।
২০২৩ সালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৫ হাজার। এ বছর করোনায় মৃত্যু হয় প্রায় ৩৭ জনের। বছরজুড়ে মৃত্যুহার ছিল প্রায় ০ দশমিক ৭ শতাংশ।
তবে ২০২৩ সালে, ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে পৌঁছায় প্রায় ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জনে। যা ২০২২ সালের তুলনায় প্রায় পাঁচগুণ বেশি। এ বছর মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের। মৃত্যুহার প্রায় ০ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
২০২৪ সালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয় প্রায় ২ হাজার ৫০০ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয় ২২ জনের। মৃত্যুহার প্রায় ০ দশমিক ৮ শতাংশ।
এদিকে একই বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় প্রায় ১ লাখ ৪৮ হাজার ৯৪৪ জন, এর মধ্যে মৃত্যু হয় ৫৭৫ জনের। মৃত্যুহার ছিল প্রায় ০ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
২০২৫ (২৯ জুন) পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের, যেখানে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৪২ জন। অর্থাৎ চলিত বছরের প্রথম ছয় মাসেই ডেঙ্গুতে করোনার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে গবেষণায় বলা হচ্ছে, চলতি মৌসুমে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ডেঙ্গুর ইতিহাস ও বর্তমান
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব শুরু হয় ১৯৬৫ সালে, তখন একে বলা হতো ‘ঢাকা জ্বর’। এরপর বিক্ষিপ্তভাবে সংক্রমণ দেখা গেলেও, ২০০০ সাল থেকে দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ ব্যাপক আকারে বাড়তে থাকে।
২০০০ সালের পর থেকে ডেঙ্গু আর থামেনি। প্রতিবারই কোনো না কোনো বছর রেকর্ড ভাঙে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায়।
ডেঙ্গুর দায় কার?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ হলেও ভ্যাকসিন, স্বাস্থ্যসেবা এবং সচেতনতার ফলে সেটি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কিন্তু ডেঙ্গু প্রতিরোধে নেই কোনো ভ্যাকসিন, নেই সুনির্দিষ্ট ও সমন্বিত পরিকল্পনা।
ঢাকাসহ দেশের প্রধান শহরগুলোতে অপরিকল্পিত নগরায়ণ, নালার জট, জলাবদ্ধতা, নির্মাণাধীন ভবনে পানি জমে থাকা ও এডিস মশার বিস্তারই মূলত ডেঙ্গুর প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।