দশ বছরের আরিয়ান এবং নয় বছরের বাপ্পি ও হুমায়ের। সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা। ছিল বন্ধু, সহপাঠী ও খেলার সাথি। তবে এক ঝড়েই ঝরে গেল তিন প্রাণ। এখন তিন সাথির স্থান হয়েছে পাশাপাশি কবরে।
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিমানবাহিনীর বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় গুরুতর আহত হয় তারা। দুর্ঘটনাস্থল থেকে দুজনকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তাদের।
প্রতিদিনের মতোই সোমবার সকালে একসঙ্গে স্কুলে গিয়েছিল আরিয়ান, বাপ্পি ও উমায়ের। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া এই শিক্ষার্থীদের স্কুল শেষে চলছিল কোচিংয়ের ক্লাস। ক্লাস শেষে আবারও ঘরে ফেরার কথা ছিল। ঘরে ফিরেছে ঠিকই তবে লাশ হয়ে।
মঙ্গলবার দিয়াবাড়ির তারারটেক মসজিদ এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শনে মিলল শোকের আবহ। দুদিন আগেও যে আঙিনায় একসাথে খেলাধুলায় মেতে থাকত এই শিশুরা সেখানেই আজ পাশাপাশি কবরে শায়িত। চোখের জলে পরিবারের কনিষ্ঠ তিন সদস্যকে বিদায় জানাল স্বজনেরা। পুরো এলাকায় যেন শোকস্তব্ধ। অঝোরে কেঁদেছেন বন্ধু, সহপাঠি আর প্রতিবেশীরাও।
তারা বলছেন, ‘এ বিদায় কষ্টের, এ বিদায় মেনে নেওয়ার মতো নয়।’
আরিয়ান, বাপ্পি ও হুমায়ের আলাদা তিনটি বাড়িতে থাকলেও তারা একই পরিবারের সদস্য, সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা। তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী বাপ্পি ওই এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আবু শাহিনের সন্তান এবং একই ক্লাসের হুমায়ের তার ভাইয়ের ছেলে। এ ছাড়া চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া দশ বছরের আরিয়ান মি. শাহিনের চাচাতো ভাই।
ঘটনার দিন সকালে প্রতিদিনের মতো একসাথেই স্কুলে গিয়েছিল এই তিনজন। সকাল ১১টায় স্কুল শেষে অংশ নিয়েছিল কোচিংয়ের ক্লাসে। বেলা দেড়টায় ক্লাস শেষ হওয়ার কথা ছিল। ওই দিন জোহরের নামাজ শেষে বাপ্পিকে আনতে স্কুলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছিলেন মি. শাহিন। এক সঙ্গেই ফেরার কথা ছিল তার ভাই আরিয়ান ও ভাতিজা হুমায়েরও।
কিন্তু পথেই শুনতে পান বিকট আওয়াজ। কিছুটা এগোতেই ধোঁয়ার কুণ্ডুলী দেখে দৌড়ে পৌছান স্কুল প্রাঙ্গণে। ‘কিন্তু ততোক্ষণে সব শেষ’ বলছিলেন মি. শাহিন।
তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে যে ক্লাসে পড়ে তার আগের ক্লাসটায় বিমানডা ঢুকছে। দেখে তহনি বুঝজি যে আমার ছেলে আর নাই।’
আহত হলেও দুর্ঘটনাস্থল থেকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছিল তার সন্তান বাপ্পি এবং ভাই আরিয়ান। তবে এর কিছুক্ষণ পরে মারা যায় হুমায়ের।
‘গত রাত তিনটা বাজে হাসপাতালে আমার ভাইটা মারা গেছে। আমার ছেলে বাপ্পি মারা গেছে সবার পরে।’ বলছিলেন মি. শাহিন।
নিহত তিন শিশুর জানাজায় অংশ নেন অনেক মানুষ। দূর থেকে এক নজর দেখতে এসেছিলেন স্বজন, প্রতিবেশী আর সহপাঠীরাও।
‘মাত্র একদিন আগে যে শিশুদের একসাথে স্কুলে যেতে অথবা খেলে বেড়াতে দেখলাম, তারা আজ নেই,’ বলছিলেন ওই এলাকার বাসিন্দা মোতালেব হোসেন। সূত্র: বিবিসি বাংলা
আপনার মতামত লিখুন :