বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০২৫, ০৫:০১ এএম

ছামীমের ডাক্তার হওয়া হলো না আর

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০২৫, ০৫:০১ এএম

বাবার কবরের পাশে শায়িত মাইলস্টোন শিক্ষার্থী ছামীম।       ছবি- সংগৃহীত

বাবার কবরের পাশে শায়িত মাইলস্টোন শিক্ষার্থী ছামীম। ছবি- সংগৃহীত

রাজধানীর উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত মেধাবী আব্দুল্লাহ ছামীম (১৪)। এমন ঘটনায় নির্বাক, নিস্তব্ধ গোটা পরিবার। ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি স্বজনদের। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার ডিএমখালি মাঝিকান্দি এলাকার আবুল কালাম মাঝি ও জুলেখা বেগম দম্পতির ছেলে আব্দুল্লাহ ছামীম। থাকতো ঢাকার উত্তরা দিয়াবাড়ি খালপাড় এলাকায়। ভাই-বোনদের মধ্যে সবার ছোট ছামীম। ছোটবেলা থেকেই ভীষণ মেধাবী সে।

স্বপ্ন চিকিৎসক হওয়ার। আগে মাদরাসায় পড়াশোনা করলেও পরবর্তীতে তাকে উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। গত ডিসেম্বর মাসে প্রবাসে মারা যায় বাবা আবুল কালাম মাঝি। এরপর থেকে মা, বোন ও বড় ভাইয়ের আশ্রয়স্থলে আদর যত্নে বেড়ে উঠছিলেন ছামীম।

প্রতিদিনের ন্যায় সহপাঠীদের সাথে সোমবার বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করছিলেন ছামীম। টিফিনের আর মাত্র ১০ মিনিট বাকি, এরই মধ্যে বিকট শব্দে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয় বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান। 

সেই ঘটনায় অন্যান্যদের সাথে গুরুতর আহত হয় ছামীম। পরবর্তীতে তাকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার করে স্বজনদের খবর দিলে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ার তাকে ভর্তি করা হয় বার্ন ইউনিটে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে ১১টার দিকে মৃত্যুবরণ করে ছামীম।

এদিকে ছামীমের মৃত্যুর খবর তার গ্রামে পৌঁছালে এলাকাজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। মঙ্গলবার সকালে তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি ডিএমখালী মাঝিকান্দি এলাকায় নিয়ে আসা হয়। পরে সকাল ৯টায় চরভয়রা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশেই সমাহিত করা হয়। ছামীমের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না স্বজনরা। আর ছেলের মৃত্যুতে কিছুক্ষণ পর পর মূর্ছা যাচ্ছেন মা জুলেখা বেগম। 

ছামীমের সাথে বেড়ে উঠেছিল তার মামাতো ভাই আব্দুল্লা হুসাইন। গ্রামে এলে তারা দুজন সময় কাটতো এক সাথে। এমনকি ঢাকায় গেলে আব্দুল্লাকেও বিভিন্ন জায়গা ঘুরিয়ে দেখাতো ছামীম। ছোট বেলার খেলার সাথীকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছে আব্দুল্লা হুসাইন। সে বলে, একসাথে বড় হয়েছি। আমি ঢাকায় কিছুই চিনতাম না, ও আমাকে ঢাকা ঘুরিয়ে দেখিয়েছে। আজ ছামীম আমাকে একা রেখে চলে গেল, আমি কীভাবে থাকবো।

আব্দুল্লাহ ছামীমের মামাতো ভাই বারেক হোসাইন বলেন, আমাদের খুবই আদরের ছিল ও। নম্র ভদ্র এবং মেধাবী হওয়ার কারণে আমরা তাকে ভীষণ ভালোবাসতাম। আমার ফুফা ৭ মাস আগে সৌদি আরবে মারা যায়। আর সেই শোক কাটাতে না কাটাতে আমাদের আদরের ছামীমও চলে গেল। সবাই ছামীমের জন্য দোয়া রাখবেন, যাতে আল্লাহপাক ওকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন।

ভাগ্নেকে ভীষণ ভালোবাসতেন মামা সাইফুল ইসলামও। ছোট ভাগ্নের এমন করুন মৃত্যু যেন কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি। 

তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকে ভীষণ মেধাবী ছিল আমার ভাগ্নে। ওর স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে চিকিৎসক হবে। বাবার মৃত্যুর পর ওকে সবাই আগলে রেখেছিলাম, আজ ও আমাদের ছেড়ে বাবার কবরের পাশেই চিরনিদ্রায়। ওর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন আজ স্বপ্নই রয়ে গেল।

এ সময় সাইফুল সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, বিমান প্রশিক্ষণের জন্য খোলা ময়দান রয়েছে। কিন্তু ব্যস্ততম এলাকায় যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিলো, সেই জায়গায় কীভাবে বিমান প্রশিক্ষণের জন্য দেওয়া হলো। আমরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই।

আহাজারি করতে করতে জুলেখা বেগম বলেন, আমার বাবা বলেছিল হাসপাতাল এতো দূরে কেন। কাছাকাছি হাসপাতাল হতে পারে না। আমাকে তোমরা চিকিৎসা করাতে বিদেশে নিয়ে যাও। আমার বাবা বাঁচতে চাইছিল। কেন আমার বাবা এভাবে চলে গেল। 

এ ব্যাপারে ভেদরগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত ইউএনও মোহাম্মদ মোজাহেরুল হক বলেন, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক একটি ঘটনা। আজ রাষ্ট্রীয় শোক পালন করছি। আমরা নিহতের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেছি। শোকসন্তপ্ত পরিবারের পাশে আমরা সব সময় থাকব।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!