শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ২৫, ২০২৫, ০৭:২৪ পিএম

মাইলস্টোনের জায়গাটি ছিল জলাধার, দায় এড়াতে পারে না রাজউক

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ২৫, ২০২৫, ০৭:২৪ পিএম

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ছবি- সংগৃহীত

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ছবি- সংগৃহীত

একসময় জায়গাটি ছিল জলাধার। নির্দেশনাও ছিল প্রাকৃতিক অবস্থায় রাখার। কিন্তু সময়ের সঙ্গে তা পরিবর্তন হয়ে যায়। গড়ে ওঠে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এমন তথ্যই সামনে এনেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)।

সংস্থাটি এও বলছে, মাইস্টোনের মতো স্থাপনা নির্মাণে অবশ্যই রাজউকের অনুমোদন লাগে। তাই বিমান দুর্ঘটনার দায় রাজউক এড়াতে পারে না। পাশাপাশি বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ছাড়পত্রবিহীন ওই স্থাপনা নির্মাণে রাজউক অনুমোদন দিতে পারে না বা দেয় না। অথচ বিমানবন্দরের রানওয়ে টেক অফ এবং ল্যান্ডিংয়ের অ্যাপ্রোচ জোনে সরাসরি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ অবস্থিত। ফলে বেবিচকও দায় এড়াতে পারে না।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, ‘এমন স্থানে মাইস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ স্থাপন বেবিচক এবং রাজউকের সমন্বয়হীনতার প্রকাশ। বিবিচকের পক্ষ হতে এই ধরনের এনওসি দেওয়ার আগে অবশ্যই পরিকল্পনাগত বিশ্লেষণ করেই অনুমতিপত্র দেওয়া উচিত। দুঃখজনকভাবে অনাপত্তিপত্র প্রদানের প্রক্রিয়ায় পরিকল্পনাগত বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে পরিকল্পনাবিদরা অন্তর্ভুক্ত নন। ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ে পরিকল্পনাবিদদের অন্তর্ভুক্তি অত্যন্ত জরুরি।’

শুক্রবার (২৫ জুলাই) বিআইপির কনফারেন্স রুমে আয়োজিত ‘মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনা: জননিরাপত্তা এবং উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রের দায় ও করণীয়’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৯৯৫ সালে প্রণীত ডিএমডিপি এবং ২০০৮/০৯ সালে প্রণীর প্রথম বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) অনুযায়ীও বর্তমান মাইলস্টোন স্কুল  অ্যান্ড কলেজ মূলত জলাধার ছিল।

বিআইপি’র ‘মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনা : জননিরাপত্তা এবং উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রের দায় ও করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন। ছবি- সংগৃহীত

সংবাদ সম্মেলনে বিআইপির সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘ওই এলাকা জলাভূমি ও জলাভূমি এলাকা ছিল, যা বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিতেও অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাহলে রাজউক কার স্বার্থে কিংবা কোন উদ্দেশ্যে ডিএমডিপি অনুসরণ না করে ফ্লাইং অ্যাপ্রোচ জোনে শহর উন্নয়নের অনুমোদন  দেয়, এ প্রশ্নটি থেকেই যায়।’

তিনি বলেন, ‘তাদের (মাইলস্টোন) সকল ভবন রাজউক ও বেবিচকের অনুমোদিত কি না এটি খতিয়ে দেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’ 

আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘দেশের জনবহুল কোনো এলাকায় প্রশিক্ষণ বিমান উড়ার কোনো সুযোগ নেই। নগর পরিকল্পনার ক্ষেত্রে বিমান উড্ডয়নের পথ সবসময় নিরাপদ রাখতে হয়, যে কারণে উন্নত বিশ্বে বিমানবন্দর শহরের থেকে তুলনামূলক দূরত্বে থাকে এবং শহর ও বিমানবন্দরের মাঝে বাফার জোন থাকে।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিমানবন্দর নির্মানকালীন সময়ে শহর থেকে দূরে থাকলেও পরবর্তীতে সময়ের সাথে সাথে ক্রম বর্ধমান শহর বিমান বন্দরের কাছাকাছি গড়ে ওঠে। শইর উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিমানের ফ্লাইং অ্যাপ্রোচ জোন বাদ দিয়ে নগরায়ন প্রয়োজন ছিল।’

বিআইপির সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান। ছবি- সংগৃহীত

বিআইপির নেতারা বলেন, ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে ও নগর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শুধুমাত্র বিমান ফ্লাইং অ্যাপ্রোচ জোন নিরাপত্তা নয়, সম্পূর্ণ ঢাকায় নিরাপদ আবাসন নিশ্চিত করা হবে। এ জন্য ভূমি দখল, দুর্নীতি ও আইন ভঙ্গের জন্য ব্যক্তির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান/সংস্থার বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান ও পদক্ষেপ নিতে হবে। তবেই সঠিক নগর পরিকল্পনা অনুসরণ করে আমাদের শিশু ও সাধারণ জনগণের নিরাপদ আবাসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

আদিল মোহাম্মদ খান এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘এয়ারপোর্টের ফ্লাইং অ্যাপ্রোচ জোন থেকে সকল ধরনের জনসমাবেশমূলক প্রতিষ্ঠান—যা শুধুমাত্র স্কুল কলেজে সীমাবদ্ধ না, হাসপাতাল, মসজিদ, ঈদগাহর মতো স্থাপনা, যা জনসমাবেশকে উদ্বুদ্ধ করে এমন ভুমি ব্যবহারকে—ধীরে ধীরে স্থানান্তর করতে হবে। তা না হলে এমন দুর্ঘটনা ঘটার ঝুঁকি থেকেই যাবে।’

সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান। ছবি- সংগৃহীত

সংবাদ সম্মেলনে বিআইপির সহসভাপতি পরিকল্পনাবিদ শাহরিয়ার আমিন, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ তামজিদুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ পরিকল্পনাবিদ ড. মুঃ মোসলেহ উদ্দীন হাসান এবং বোর্ড সদস্য আবু নাঈম সোহাগ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই বিআইপির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ তামজিদুল ইসলাম, বিআইপি গবেষণা দল কর্তৃক করা একটি র‌্যাপিড  এসেসমেন্ট থেকে কিছু তথ্য তুলে ধরেন এগুলো হলো:

১. মাইলস্টোন স্থায়ী ক্যাম্পাসের অবস্থান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের ইনার অ্যাপ্রোচ এলাকায়, যা বিমানবন্দরের কার্যকারিতা, নিরাপত্তা, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাধা দেয় এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যঝুঁকির জন্য দায়ী (যেমন অতিরিক্ত শব্দদূষণ, ভারী কার্বন নিঃসরণ)।

২. CAAB-Obstacle Limitation Surface সংক্রান্ত যাত্রীবাহী বিমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভবনের উচ্চতা সংক্রান্ত নিয়ম উল্লেখ করলেও জমির কার্যকর ব্যবহার (Land Use Function) বা কী ধরনের স্থাপনা বা প্রতিষ্ঠান ওই এলাকায় থাকা উচিত নয় সে বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট বিধিনিষেধ দেয় না।

৩. DMDP ও DAP-এ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আশেপাশের সংবেদনশীল এলাকা (OLS Zone)-গুলোর জন্য জননিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে জমির ব্যবহার সম্পর্কিত কোনো নীতিমালা বা বিধিনিষেধ প্রদান করেনি। 

৪. বৈশ্বিক অনুশীলন অনুযায়ী, বিমানবন্দরের রানওয়ের ইনার অ্যাপ্রোচ এলাকায় এমন জমি ব্যবহার (Land Use)—যেখানে জনসমাগম ঘটে, যেমন: আবাসিক এলাকা, স্কুল, কমিউনিটি সেন্টার, হাসপাতাল, ও বাণিজ্যিক ভবন—এসব স্থাপনাকে অনুৎসাহিত (discouraged) করা হয়, যা বাংলাদেশের বিমান বন্দরগুলোতে লক্ষ করা যায় না। 

বিআইপির প্রস্তাবনা ও কর্মপরিকল্পনা:

১. সরকারের উদ্যোগে দুর্ঘটনা কবলিত এলাকায় এবং ফ্লাইং অ্যাপ্রোচ জোনে ও ফানেলের এলাকার নির্ধারিত সীমানায় জনসমাবেশ হয় এমন কী কী স্থাপনা আছে এবং টেকনিকাল এসেসমেন্ট করে সেখানকার কোন কোন ভবনের অনুমোদন নেই তা নির্ণয় করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ধরনের কাজে বিআইপি স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী।

২. পরবর্তী কর্মপরিকল্পনায় ঢাকা শহরে পরিকল্পনা সম্পর্কিত যে সকল ব্যত্যয় আছে তা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।

৩. যেই ব্যক্তি ড্যাপ, ডিএমডিপি-এর অনুমোদিত ভূমি ব্যবহারের ব্যত্যয় ঘটিয়ে স্কুল পরিচালনা করছেন, তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রণালয়, রাজউকসহ যে সকল প্রতিষ্ঠান ও মন্ত্রণালয়গুলোর দায় আছে তাদের দায় নিশ্চিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

৪. সর্বোপরি নিরাপদ ও কার্যকরী নগরায়নের জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

৫. মহাপরিকল্পনাসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়নে ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মহলের অবৈধ প্রভাব বন্ধ করা এবং বল প্রয়োগকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া।

৬. দেশের পরিকল্পিত ও টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে নগর ও উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাসমূহে পরিকল্পনাবিদদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা।

৭. দেশের পরিকল্পিত ও টেকসই উন্নয়ন এবং মহাপরিকল্পনাসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা ও আইনের বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ী, শিল্প কারখানার মালিক, রাজনীতিবিদ, আমলা, স্বার্থসংশ্লিষ্ট পেশাজীবী, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি সংস্থাসমুহের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া।
 

Shera Lather
Link copied!