গোপালগঞ্জে সহিংসতায় গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। সংস্থাটির মতে, গত ১৬ জুলাই এনসিপি’র রাজনৈতিক সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতা, গুলি, গণগ্রেফতার, শিশুদের আটকের মতো ঘটনায় নাগরিক অধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে আসক এসব তথ্য জানায়।
পর্যবেক্ষণে বলা হয়, সমাবেশে দেওয়া এক নেতার আক্রমণাত্মক বক্তব্যের জেরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে পড়ে এবং তা ছড়িয়ে পড়ে সহিংস সংঘর্ষে। ঘটনাস্থলে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে পাঁচজন নিহত হন এবং বহু মানুষ আহত হন। নিহতদের মধ্যে চারজনকে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয় বলে দাবি করেছে আসক।
সংস্থাটির চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ২১ ও ২২ জুলাই সরেজমিন তদন্ত করে। তারা আহত, নিহত, আটক ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্য, স্থানীয় নাগরিক, চিকিৎসক, কারা কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্যের সঙ্গে কথা বলেন।
আসকের ভাষ্যমতে, কারফিউ ও ১৪৪ ধারা জারির পর নির্বিচারে মানুষ গ্রেফতার ও আটক করা হয়েছে। স্থানীয়দের বক্তব্য অনুযায়ী, কোথাও কোথাও পুলিশ ‘আটকের ভয়’ দেখিয়ে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করেছে। সহিংসতা না ঘটলেও বেশ কিছু এলাকায় ধরপাকড় চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সংস্থাটি জানায়, সহিংসতায় নিহত পাঁচজনের মধ্যে ইমন তালুকদার, রমজান কাজী, দীপ্ত সাহা, সোহেল মোল্লা ও রমজান মুন্সী রয়েছেন। এদের মধ্যে কেবল রমজান মুন্সীর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর চাপের মুখে ২১ জুলাই আরও তিনটি মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করা হয়।
আসকের তদন্তে আরও উঠে এসেছে, পুলিশের গুলিতে আহত অনেকেই ছিলেন নিরীহ পথচারী ও কর্মজীবী মানুষ। অনেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।
আসক আরও জানিয়েছে, সহিংসতা নিয়ে গোপালগঞ্জের বিভিন্ন থানায় এখন পর্যন্ত ৮টি মামলা দায়ের হয়েছে। এতে প্রায় ৫ হাজার ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকেই সংখ্যালঘু ও নারী। ১৮ জন শিশুকে গ্রেফতার করে তাদের অনেককে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
কারা কর্তৃপক্ষের বরাতে আসক জানিয়েছে, কারাগারের ধারণক্ষমতা ছাড়িয়ে যাওয়ায় ১৫০ জন বন্দিকে অন্য জেলায় স্থানান্তর করা হয়েছে। হামলায় গোপালগঞ্জ কারাগারের স্থাপনায় ক্ষতি হয়। কারা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ‘মিসফায়ার’ করেছে বলে জানানো হয়।
আসকের প্রতিনিধিরা গোপালগঞ্জ সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও সফল হয়নি।
সংস্থাটি বলেছে, সমাবেশের আগে দোকানপাট জোরপূর্বক বন্ধ করা, মাইক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা, সমাবেশে বাধা প্রদান, হামলার পর সেনা-পুলিশের নির্বিচার গুলি চালানো, নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি, ভয়ভীতি এবং শিশুদের আটকের ঘটনায় গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটেছে।
এছাড়া, নিহত ও আহতদের পরিবারের অভিযোগ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান বিচার করে আসক মনে করে, এ ঘটনায় একটি পূর্ণাঙ্গ, নিরপেক্ষ ও বিচারিক তদন্ত জরুরি।