ঢাকা রবিবার, ২০ জুলাই, ২০২৫

আব্বু চাইত আমি নামকরা শিল্পী হই: প্রসূন আজাদ

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জুলাই ২০, ২০২৫, ০৫:২৪ এএম
অভিনেত্রী প্রসূন আজাদ। ছবি - সংগৃহীত

নিখোঁজের দীর্ঘ ২৮ ঘণ্টার পর রাত ৮টার দিকে সন্ধান মিলেছে অভিনেত্রী প্রসূন আজাদের বাবা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা আজাদ হোসেনের। নিখোঁজের এই সময়টা অভিনেত্রী সারাদিন ধরে থানা, হাসপাতাল, রেলস্টেশনসহ নানা জায়গায় বাবার খোঁজে দৌড়াদৌড়ি করেছেন। সেই অভিজ্ঞতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক দীর্ঘ পোস্টে শেয়ার করেছেন তিনি।

প্রথমে নিজের শারীরিক অবস্থা জানিয়ে ফেসবুক পোস্টে প্রসূন আজাদ লিখেছেন, ‘জ্বর জ্বর লাগতেছে। কথা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। আজকে রোদের তাপ প্রবল ছিল। শেষ কবে এমন ঝলমলে রোদে পথে পথে হেঁটেছি মনে পড়ে না। ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে শুধু মনে মনে বলেছিলাম এখানে যেন না থাকে। কমলাপুর স্টেশনে এমন কোনো ভিক্ষুক নাই, এমন কোনো কুলি নাই; এমন কোনো টোকাই নাই যে আমার কান্নাকাটি দেখে কাঁদে নাই। কী সম্পর্ক আমার তাদের সাথে? না আমি জীবনে কখনো তাদের দেখেছি, না তারা আমাকে চিনতো। কত মানুষ আজকে আমাকে হেল্প করেছে, অগণিত। মানুষ মানুষের জন্য-কত চমৎকার কথা। কত নির্ভেজাল সুন্দর জীবনযাপন করা যেত যদি সবাই সবার খেয়াল রাখতে পারতাম। কত লোক দেখলাম, কত কত মানুষ মাটিতে শুয়ে আছে। এত মানুষ কিন্তু আমার বাবার মুখটা কোথাও দেখি নাই।’

বাবার ফিরে আসার কথা জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘সন্ধ্যায় গ্যারেজ ভর্তি পুলিশ, তখন আমরা এলাকার ফুটেজ দেখে বুঝতে চাচ্ছিলাম কোন দিকে গেছে। অবশেষে আব্বু ফিরে আসছে। আমার বাবা সারা জীবন মানুষের জন্য কাজ করেছে। ১৬ বছর বয়স থেকে আমি কাজ করি। শুধুই কাজ না, বেশ পরিশ্রমের কাজ। নিজে নিজেই অর্থ উপার্জন করি। আমার বাবা কখনো বাধা দেয় নাই, কাজের সুযোগ করে দিয়েছে। কোনো কাজ এনে দেয় নাই। কোনো বড় অবস্থানে পৌঁছে দেয় নাই। শুধুই আমার পাশে ছিল। সাহস হয়ে, ছায়া হয়ে। আব্বু চাইত আমি নামকরা শিল্পী হই। হতে পারি নাই। কিন্তু আমি চেষ্টা করেছি, করছি। শুধু বলত, কখনো ৫ টাকা রোজগার করলে ২ টাকা মানুষকে দিও, যার প্রয়োজন।’

বাবার অবসর জীবনের কথা উল্লেখ করে প্রসূন লিখেছেন, ‘রিটায়ারমেন্টের পর জীবনটা একটু স্লো হয়ে গেছে আব্বুর। আমার নিজের সংসারে সময় দিয়ে আমি কখনো প্রয়োজন মনে করি নাই আব্বুকে একটু সময় দেয়ার। চাপা কষ্ট, চাকরি জীবনের পরিশ্রম, সহকর্মীদের হঠাৎ করেই দূরত্ব; পারিবারিক জীবনে অভ্যস্ত হওয়া-সব মিলিয়ে আব্বু ভীষণ একাকিত্বে ডুবে যায়। যার ফলাফল গত ২৭/২৮ ঘণ্টার দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা। আমার সাথে ফেসবুকে আমার বাবা-মা নাই। তারা অন্য ১০ জন অপরিচিত বা যারা বন্ধু নয় তাদের মতোই হয়তো আমাকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে দেখে। আব্বু যদি আমার পোস্টটা পড়ে তাহলে আমি কিছু কথা বলতে চাই, কারণ সামনাসামনি এগুলো বলার সুযোগ নাই। আব্বু বারবার এড়িয়ে গেছে ঠিক কী কারণে কোথায় ছিল।’

বাবাকে বলতে না পারা কথাগুলো তার উদ্দেশে লিখেছেন, ‘আমারও অনেক সময় ইচ্ছে করে যাই চলে এদিক-সেদিক। কিন্তু যাই না। আমাকে কে পছন্দ করে তার থেকে বেশি জরুরি আমি কাকে পছন্দ করি। আমাকে ছাড়া কার জীবন অচল, তার থেকে বেশি জরুরি আমি কাদের জন্য জীবন উৎসর্গ করছি। বিনিময় বা হিসাবের বাইরে যেসব মনের লেনদেন। অনেক সময় আমার মন মতো কিছু হয় না। তার মানে কি আমাকে দেওয়া প্রতিটা রহমত আমি অস্বীকার করব? এটা কি সঠিক বিচার হবে খোদার দরবারে? সব হিসাব আমিই যদি করতে পারি, আল্লাহ পাকের কাজ কী? আমি আমার নসিব তার কাছে ছেড়ে দিয়েছি। আমি আমার সমস্ত চিন্তাভাবনা তার হাতে দিয়েছি, যে শুধু আমি না, সমস্ত জীবজড়র ঊর্ধ্বে এবং উত্তম। আমি তো আপনাকে ছাড়া আর কিছুই চাই না আব্বু। আমার প্রয়োজনই নাই সম্পত্তির। আমার যতদিন হাত-পা আছে, আমি খেটেই পয়সা কামাবো।’

নিজের প্রসাধনী ব্যবসার কথা উল্লেখ করে সবশেষে প্রসূন আজাদ লিখেছেন, ‘নেইল লেস শপ, ব্যবসা-এসবের কিছুই প্রয়োজনই নাই আমার। তবুও করি কারণ আমি কাজ ভালোবাসি। ব্যস্ততা পছন্দ করি। নতুন নতুন মানুষ আমার সাথে কানেক্ট করছে, এটা আমার জন্য আনন্দের। কোনো হতাশা নাই। আমি ডাল-ভাত খেয়ে জীবন পার করতে পারব। যদি কারো সাথে কোনো লেনদেন, বনিবনা না হয়, কষ্ট পাবেন না। কেউ বেঈমানি করলে ছেড়ে দেন আল্লাহর কাছে। আমাদের জীবন সহজ করেন। আমরা আপনাকে ছাড়া আর কিছুই চাই না।’