বিশ্বে প্রতি বছর যেসব কারণে সর্বাধিক প্রাণহানি ঘটে তার মধ্যে ক্যান্সার, কিডনি, লিভারসিরোসিস, জন্মগত হৃদরোগ, স্ট্রোকে প্যারালাইজড ও থ্যালাসেমিয়া অন্যতম। বাংলাদেশে প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ এসব জটিল ও দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রাণঘাতী এসব অসুখের চিকিৎসাও বেশ খরচের। দেশের বেশির ভাগ মানুষ ব্যয়বহুল এই চিকিৎসা করাতে গিয়ে আর্থিকভাবে দুর্বল ও সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়াধীন সমাজসেবা অধিদপ্তর ‘হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যক্রম’-এর মাধ্যমে দুঃস্থ ও অসহায় রোগীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করে থাকে।
‘ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদরোগ এবং থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের আর্থিক সহায়তা কর্মসূচি, ২০১৯ (সংশোধিত) নীতিমালা’ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে বর্তমানে দূরারোগ্য এসব ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীদের এককালীন জনপ্রতি পঞ্চাশ হাজার টাকা হারে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হয়।
আর্থিক সহায়তা নিতে আগ্রহী আবেদনকারী নির্ধারিত ফরমে আবেদনপত্র পূরণ করে যথাযথভাবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের কপি সংযুক্ত করে পরিপূর্ণ আবেদন সংশ্লিষ্ট উপজেলা-শহর সমাজসেবা অফিসারের কার্যালয়ে জমা দিলে প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ের পরে উপজেলা-শহর সমাজসেবা কার্যালয় হতে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয় এবং জেলা কমিটির মাধ্যমে সংক্ষিপ্ততম সময়ে উপকারভোগীদের ব্যাংক একাউন্টে অনুদানের অর্থ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
চিকিৎসা সহায়তার সরকারি অনুদানের অর্থ যেভাবে পাওয়া যায়
প্রথমে ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যালাইজড, জন্মগত হৃদরোগ এবং থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীকে সংশ্লিষ্ট রোগের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ও টেস্ট রিপোর্টসহ নিম্নোক্ত কাগজপত্র সংযুক্ত করে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। আবেদন পত্রের ফরম সমাজসেবা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট হতে সংগ্রহ করতে হবে অথবা এই লিংকে ক্লিক করেও করা যাবে।
উক্ত আবেদনপত্র যথাযথভাবে পূরণ করে হার্ডকপি সংশ্লিষ্ট উপজেলা-শহর সমাজসেবা অফিসার বরাবর দাখিল করতে হবে। আবেদনপত্রের সাথে রোগীর জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি এবং দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি যুক্ত করতে হবে। নিজের বাড়ি যে জেলায় সেই জেলাতেই আবেদনের জন্য বিবেচিত হবেন। আবেদন ফরমের নির্ধারিত অংশে চিকিৎসকের একটি প্রত্যয়নের পাতা রয়েছে সেটি যথাযথভাবে চিকিৎসক দ্বারা পূরণ করে নিতে হবে। রোগীর রোগ সম্পর্কিত ব্যবস্থাপত্র ও রোগী দেখে চিকিৎসক এটিতে রোগের ধরন লিখে দেবেন। এই অংশ পূরণ ছাড়া আবেদন অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে।
আবেদনপত্রের সাথে যেসব দলিলাদি সংযুক্ত করতে হবে
১. ক্যান্সার রোগের ক্ষেত্রে Histopathology/Cytopathology বা বোন ম্যারো রিপোর্ট বা অন্যান্য টেষ্ট রিপোর্ট থাকতে হবে। কেমোথেরাপি/রেডিওথেরাপির দলিলাদি (যদি থাকে)
২. কিডনি রোগের ক্ষেত্রে Acute Renal Failure বা Chronic Renal Failure-এ আক্রান্ত ডায়ালাইসিস সেবা নিচ্ছে, কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে অথবা কিডনি প্রতিস্থাপন করেছে এমন দলিলাদি। রক্তে ইউরিয়া ও ক্রিয়েটিনের মাত্রার রিপোর্ট থাকতে হবে।
৩. লিভার সিরোসিস রোগের ক্ষেত্রে লিভারের আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট এবং অন্যান্য টেষ্ট রিপোর্ট থাকতে হবে।
৪. স্ট্রোকে প্যারালাইজড আক্রান্ত রোগীকে নিউরোলজিষ্ট কর্তৃক প্রত্যায়িত হতে হবে এবং MRI/CT Scan Report থাকলে ভাল হয়।
৫. জন্মগত হৃদরোগের ক্ষেত্রে Echo Cardiogram রিপোর্ট এবং অন্যান্য টেষ্ট রিপোর্ট থাকতে হবে।
৬. থ্যালাসেমিয়া রোগের ক্ষেত্রে রক্তের হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফোরেসিস (Hemoglobin Electrophoresis) বা অন্যান্য প্রযোজ্য পরীক্ষার রিপোর্ট থাকতে হবে।
৭. জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম সনদ (গেজেটেড অফিসার কর্তৃক সত্যায়িত ফটোকপি) থাকতে হবে।
৮. আবেদনকারী এক অর্থ বছরে একবারের বেশি আবেদন করতে পারবেন না। আবেদনে ইতোপূর্বে সমাজসেবা অধিদপ্তর/মন্ত্রণালয় হতে চিকিৎসা বাবদ অর্থ গ্রহণ করা হয়েছে কি না তা উল্লেখ করতে হবে।
নীতিমালায় বর্ণিত প্রার্থী নির্বাচনের মানদণ্ড
- প্রার্থীকে অবশ্যই বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক হতে হবে
- সর্বোচ্চ দুঃস্থ ও উল্লিখিত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে
- ভূমিহীন বা যার ০.৫০ একরের কম ভূমি আছে এমন ব্যক্তি অগ্রাধিকার পাবেন
- শিশু, নিঃস্ব, উদ্বাস্তু ও ভূমিহীন ক্রমানুসারে অগ্রাধিকার পাবেন
- বয়োজ্যেষ্ঠ, বিধবা, তালাকপ্রাপ্তা, বিপত্নীক, নিঃসন্তান, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিদেরকে ক্রমানুসারে অগ্রাধিকার পাবেন।
- যেসব কারণে আবেদন বা আর্থিক সহায়তা বাতিল হতে পারে
- ভুল তথ্য দিলে কিংবা দাখিলকৃত কাগজপত্রের সঠিকতা প্রমাণিত না হলে
- সরকার কর্তৃক অন্য কোন আর্থিক সুবিধা এ উদ্দেশ্যে গ্রহণ করলে
- আর্থিক সহায়তার জন্য তালিকাভুক্তির পর তা গ্রহণে ইচ্ছুক না হলে
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫(ঘ) অনুচ্ছেদে বর্ণিত অঙ্গীকার ‘সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার, অর্থাৎ বেকারত্ব, ব্যাধি বা পঙ্গুত্বজনিত কিংবা বৈধব্য, মাতাপিতাহীনতা বা বার্ধক্যজনিত কিংবা অনুরূপ অন্যান্য পরিস্থিতিজনিত আয়ত্তাতীত কারণে অভাবগ্রস্ততার ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্য লাভের অধিকার’ রক্ষায় সরকার নানাবিধ সামাজিক সুরক্ষামূলক উদ্যোগ নিয়ে থাকে।