ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে মডেল টেস্টের নামে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। বার্ষিক পরীক্ষার আগে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৬০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। অভিযোগ উঠেছে, অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষার আগেও একই প্রক্রিয়ায় সমপরিমাণ টাকা নেওয়া হয়েছিল।
সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) থেকে বিদ্যালয়ে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির মডেল টেস্ট পরীক্ষা শুরু হয়েছে। চতুর্থ শ্রেণিতে মোট শিক্ষার্থী ২৪০ জন এবং পঞ্চম শ্রেণিতে দুই শিফটে ৩০০ জন ছাত্রী রয়েছে। সব মিলিয়ে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে জনপ্রতি ৬০০ টাকা করে তুললে প্রায় তিন লাখ টাকা আদায় হয়।
চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীর অভিভাবক রাসেল আকন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষার আগেও প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৬০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছিল। প্রথমে তারা এক হাজার টাকা চেয়েছিল। এখন আবার বার্ষিক পরীক্ষার আগে মডেল টেস্টের নামে শিক্ষার্থীপ্রতি ৬০০ টাকা করে নিচ্ছে। মডেল টেস্টের নামে এই বিপুল পরিমাণ টাকা দেওয়া আমাদের জন্য জুলুম হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
একই শ্রেণির আরেক ছাত্রীর বাবা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘স্কুল থেকে মডেল টেস্টের নাম করে শিক্ষকরা ৬০০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আমাদের তো বাধ্য হয়েই দিতে হচ্ছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, ‘প্রতি বছরই প্রধান শিক্ষকসহ গুটিকয়েক শিক্ষক মিলে বাচ্চাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা উত্তোলন করে তা আত্মসাৎ করেন। শিক্ষকরা চাইলে বিনা খরচেই মডেল টেস্ট নিতে পারেন। যেহেতু সরকারি স্কুলে অধিকাংশ গরিব ও নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে, তাই তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হলে অভিভাবকরা আর্থিক চাপে পড়েন।’
এ বিষয়ে বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাছিমা আক্তার জানান, ‘চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে লটারির মাধ্যমে ভর্তি হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী দুর্বল। বার্ষিক পরীক্ষার আগে তাদের প্রস্তুতিমূলক মডেল টেস্ট নেওয়া হচ্ছে।’
জনপ্রতি ৬০০ টাকা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘টাকা তোলার ব্যাপারে নিয়মের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। যেহেতু শিক্ষকরা পরীক্ষা নেবেন এবং সলভ ক্লাস করাবেন, সেহেতু টাকা তাদের দিতেই হবে।’
ময়মনসিংহ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহছিনা খাতুন বলেন, ‘বিষয়টি তার জানা নেই। তবে তিনি স্পষ্ট করেন, সরকারি স্কুলে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে মডেল টেস্ট নেওয়ার কোনো বিধান নেই। মডেল টেস্টের নাম করে তারা যদি টাকা নিয়ে থাকে, তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ময়মনসিংহের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহা. নাসির উদ্দীন জানান, ‘বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে আগেও টাকা নিয়ে মডেল টেস্টের অভিযোগ উঠেছিল এবং প্রধান শিক্ষককে সতর্ক করা হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘পুনরায় খোঁজখবর নেওয়া হবে। তারা যদি আবারও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’



