ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর খসড়া আচরণবিধি চূড়ান্ত করতে দেশের রাজনৈতিক দল, নাগরিক ও বিভিন্ন সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া অর্ধশতাধিক প্রস্তাব বিশ্লেষণ করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এসব প্রস্তাবের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তথা এআই ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার রোধ, ডিজিটাল প্রচারণার নীতিমালা এবং নির্বাচনি পোস্টার নিষিদ্ধের বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে।
চলতি বছরের ৩০ জুন ‘রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধিমালা, ২০২৫’ শীর্ষক খসড়া প্রকাশ করে ইসি। ১০ দিনের মধ্যে ৪২টিরও বেশি মতামত জমা পড়ে। এর মধ্যে বিএনপি, বাংলাদেশ জাসদ, বিকল্পধারা, ইসলামী ঐক্যজোটসহ অন্তত আটটি রাজনৈতিক দল এবং টিআইবি, আইইডি-র মতো কয়েকটি সংস্থা ও ২৯ জন ব্যক্তি মতামত দিয়েছেন।
ইসির নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম জানান, খসড়ায় এআই প্রসঙ্গ না থাকলেও এ প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে একাধিক প্রস্তাব এসেছে। এগুলো কমিশনে আলোচনার পর চূড়ান্ত আচরণবিধিতে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।
গত ২৬ জুলাই খুলনায় এক অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘প্রযুক্তির অপব্যবহার এখন বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে হুবহু বক্তব্য নকল করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।’ এ সমস্যা মোকাবিলায় দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ দল কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে টিআইবি ও কয়েকটি দলের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়া কনটেন্ট ছড়ালে তা নিয়ন্ত্রণে বিটিআরসি’র হস্তক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।
একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও এআই ব্যবহারের জন্য আচরণবিধিতে আলাদা অনুচ্ছেদ সংযোজন, মিডিয়া সেল গঠন, অপব্যবহারকে নির্বাচনী অপরাধ হিসেবে গণ্য করা এবং সংশ্লিষ্ট দলের দায় নির্ধারণের সুপারিশ এসেছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে আচরণবিধির প্রতিটি ধারার সঙ্গে একমত পোষণ করা হয়েছে। দলটি চায়, নির্বাচনি প্রচারে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিব যেন হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে পারেন।
গণমাধ্যমে নির্বাচনি ডায়ালগে অংশ নিতে প্রার্থী সংখ্যার ভিত্তিতে সময় বরাদ্দের দাবিও জানানো হয়েছে। ২০০৮ সালে এমন নজির ছিল বলে দলটির দাবি।
পোস্টার ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করতে পোস্টারের সংজ্ঞায় ব্যানার, ডিজিটাল ডিসপ্লে, টি-শার্ট ও অন্যান্য বিজ্ঞাপনচিত্র অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। টিআইবি প্রার্থীদের হলফনামায় দেওয়া সম্পদ ও ঋণ তথ্য যাচাইয়ে অটোমেশন চালুর সুপারিশ করেছে।
ইসি সূত্র জানায়, আচরণবিধি গেজেট আকারে প্রকাশের আগে সংশ্লিষ্ট আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সরকারের অনুমোদন মিললে অধ্যাদেশ আকারে জারি হতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :