ঢাকা শুক্রবার, ০৮ আগস্ট, ২০২৫

দুধ ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার

বাসস
প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২৫, ০২:১৯ পিএম
দুধ ও মাংস। ছবি- সংগৃহীত

জাতীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ, গ্রামীণ দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং কৃষক সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে স্থানীয় গবাদি পশুর জাত উন্নত করে দুধ ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার।

এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে, সরকার চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে ‘দুধ ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রুভেন বুল উৎপাদন’ নামক একটি পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর (ডিএলএস) এবং বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) যৌথভাবে চারটি বিভাগের ১৮টি জেলার ৯৩টি উপজেলায় ৬৯ কোটি টাকার সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।

প্রকল্পের আওতায়, দেশি-ফ্রাইজিয়ান, দেশি-সাহিওয়াল ক্রস, লাল চট্টগ্রাম, পাবনা, মুন্সীগঞ্জ এবং উত্তরবঙ্গের ধূসর জাতের ৪০০টি ষাঁড় বাছুর তাদের মাতৃ গাভীর গড় দুধের ওপর ভিত্তি করে সংগ্রহ করা হবে।

সংগৃহীত সকল বাছুরের কর্মক্ষমতা পরীক্ষা করা হবে। এরপর ২০০টি ষাঁড়কে ‘বাছাইকৃত ষাঁড়’ হিসেবে নির্বাচিত করা হবে। এদের প্রত্যেকটি থেকে বীর্য সংগ্রহ করা হবে এবং প্রজনন মান মূল্যায়নের পর সেরাটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘প্রুভেন বুল’ হিসেবে মনোনীত করা হবে।

ডিএলএস-এর প্রকল্প পরিচালক ড. এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রুভেন বুল’ ব্যবহার করে প্রজনন উচ্চ-ফলনশীল গবাদি পশুর জাত তৈরিতে সহায়তা করবে যা আরও দুধ এবং মাংস উৎপাদন করতে সক্ষম।

প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো গবাদি পশুর উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং টেকসই করা, দেশীয় জাতের জিনগত বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ ও উন্নত করা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষক ও মাঠ কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উল্লেখ করেন, এই উদ্যোগটি পশুপালন উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের বৃহত্তর লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

তারা জাতীয় প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন নীতি ২০০৭-এর কথাও উল্লেখ করেছেন, যা দেশব্যাপী উন্নত ষাঁড়ের প্রচার নিশ্চিত করার জন্য সঠিক জেনেটিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে প্রজননকারী পশুদের কঠোরভাবে নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়।

প্রকল্পের নথি অনুসারে, গ্রামীণ এলাকায় অনেক হাইব্রিড গাভী ইতিমধ্যেই প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ লিটার দুধ উৎপাদন করে। তবে, এই উৎপাদন বজায় রাখার জন্য উচ্চমানের বীর্য ব্যবহার প্রয়োজন।

তিনি বলেন, অপরিকল্পিত এবং অনিয়ন্ত্রিত প্রজনন, নির্বিচারে বীর্য ব্যবহারের পাশাপাশি উচ্চ ফলনশীল গাভীর উৎপাদনশীলতা হ্রাস করছে। এ কারণেই দুধ ও মাংস উৎপাদন টিকিয়ে রাখার এবং উন্নত করার জন্য প্রমাণিত উন্নত জাতের ষাঁড়ের বিকাশ এখন অপরিহার্য।

এই প্রকল্পের আওতায় ৩৪ হাজার ৩৭৫ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং ‘এলিট গরু’ কর্মসূচির অধীনে উচ্চ উৎপাদনক্ষম গাভীর ৭ হাজার ৫০০ মালিককে প্রণোদনা দেওয়া হবে। কৃষকদের উন্নত জাতের ষাঁড়ের বীর্য ব্যবহারে উৎসাহিত করা হবে, পাশাপাশি সহায়তার অংশ হিসেবে টিকা, ওষুধ ও পশুখাদ্য সরবরাহ করা হবে।

এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএউচও) প্রতি ব্যক্তির জন্য দৈনিক ২৫০ মিলিলিটার দুধ গ্রহণের সুপারিশ করে, কিন্তু বাংলাদেশে প্রকৃত গ্রহণ সে হিসেবে অনেক কম।

গৃহস্থালী আয় ও ব্যয় সমীক্ষা (এইচআইইএস) ২০২২ অনুসারে, দেশে দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্যের গড় মাথাপিছু দৈনিক ভোগ মাত্র ৩৪.১ গ্রাম, যা পশুপালন উৎপাদনশীলতা উন্নত করার জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।

সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে দেশে গরু-ছাগলের প্রায় দেড় লাখ খামার গড়ে উঠেছে। এছাড়া দেশে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মিলিয়ে দুধ উৎপাদনকারী খামারের সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ। এই শিল্পে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় এক কোটি মানুষ। ফলে দেশজুড়ে গরু ও ছাগল উৎপাদনে এক ধরনের নীরব বিপ্লব ঘটছে।

মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত খামারের সংখ্যা ৬৬ হাজার ও অনিবন্ধিত ৭০ হাজার। সব মিলিয়ে মোট খামার ১ লাখ ৩৬ হাজার। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত খামারির সংখ্যা ৫ লাখ ৭৭ হাজার ৪১৬ জন।

দুগ্ধশিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে সরকারের নেওয়া নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেশের দুধ উৎপাদনে যে ঘাটতি রয়েছে, তা পূরণ হবে বলে আশা করছে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।