মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি ও রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২৫, ১০:০০ এএম

আজ বিশ্ব হাতি দিবস

নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি ও রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২৫, ১০:০০ এএম

হাতি। ছবি- সংগৃহীত

হাতি। ছবি- সংগৃহীত

আজ ১২ আগস্ট, বিশ্ব হাতি দিবস। বিশ্বব্যাপী এই দিনটি পালিত হয় এশীয় ও আফ্রিকান হাতির সুরক্ষা, সংরক্ষণ এবং সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে। ২০১২ সালে কানাডীয় নির্মাতা প্যাট্রিসিয়া সিমস ও থাইল্যান্ডের এলিফ্যান্ট রিইন্ট্রোডাকশন ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে দিবসটি পালনের সূচনা ঘটে। আর এই দিনে বাংলাদেশের পার্বত্য ও সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে বন্য হাতির জীবন নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ বাড়ছে।

গারো পাহাড়ে হাতি-মানুষ

শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার গারো পাহাড়ে গত ৩০ বছরে (১৯৯৫-২০২৫) হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্বে ৪৭টি হাতি এবং ৬৭ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক। বন উজাড়, হাতির চলাচলের করিডোর বন্ধ হয়ে যাওয়া ও খাদ্য সংকটের কারণে হাতির দল লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। ধান ও কাঁঠালের মৌসুমে এ প্রবণতা আরও বেড়ে যায়।

১৯৯৫ সালে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পিক পাহাড় থেকে দলছুট হয়ে আসা ২০-২৫টি হাতি এখন পুরো গারো পাহাড় এলাকায় বিচরণ করছে। কিন্তু ভারতের কাঁটাতারের বেড়া ও বিএসএফের বাধার কারণে তারা আর ফিরতে পারেনি।

সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর মানুষ এখন আতঙ্কে দিন কাটান। কৃষক জোসেফ সাংমা বলেন, ‘প্রায় ১৫ বছর ধরে হাতির সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছি। প্রতি বছর ফসল খেয়ে সাবাড় করে।’

সরকার ২০১৪ সালে ১৩ কিলোমিটার বায়োফেন্সিং, ২০১৫ সালে ১০০ হেক্টরে হাতির খাদ্যবাগান, লেবু ও বেতের ঝোঁপ তৈরি করে প্রতিরোধের চেষ্টা করে। পাশাপাশি সীমান্তে নির্মাণ করা হয় ১৬টি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। গঠন করা হয় ৫০টি এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম (ERT)।

তবে এসব উদ্যোগ হাতির খাদ্য সংকট মেটাতে ব্যর্থ হওয়ায় হাতি প্রতিনিয়ত লোকালয়ে চলে আসছে। বন বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারাও বলছেন, ‘মানুষ ও হাতির নিরাপত্তার জন্য বৈজ্ঞানিক পরিকল্পনা ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থাপনা জরুরি।’

রাঙামাটিতে সাফল্যের গল্প

হাতি-মানুষ দ্বন্দ্ব যেখানে অন্যত্র উদ্বেগের বিষয়, সেখানে রাঙামাটির বরকল ও লংগদু উপজেলায় তৈরি হয়েছে আশার আলো। বর্তমানে এ অঞ্চলে ১৪টি এশীয় হাতি রয়েছে, যা কয়েক বছর আগেও ছিল ১২টি। সম্প্রতি দুটি শাবকের জন্ম দিয়েছে একটি দল।

এমন অর্জনের পেছনে রয়েছে স্থানীয় এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের (ERT) ভূমিকা। তারা রাত হলে বাঁশি বাজিয়ে হাতি তাড়ান, খবর পেলে বন বিভাগ দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। ক্ষয়ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়।

(ইআরটি) সমন্বয়ক মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘হাতি ক্ষতি করলে সরকারকে জানাই। হাতি লোকালয়ে এলে তাড়িয়ে দিই, কিন্তু আমরা আঘাত করি না।’

বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ বছরে হাতির দ্বারা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ৩৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ বিতরণ করা হয়েছে।

রাঙামাটির বন সংরক্ষক মো. আবদুল আউয়াল সরকার বলেন, ‘সরকার চাইছে হাতি লোকালয় থেকে ফিরে যাক বনাঞ্চলে। এজন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।’

কক্সবাজারে হাতির করুণ দশা

কক্সবাজারে হাতির অবস্থা সবচেয়ে সংকটজনক। বন ধ্বংস, রোহিঙ্গা শিবির স্থাপন ও রেললাইন নির্মাণের কারণে বহু করিডোর বন্ধ হয়ে গেছে।

২০১৫ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত কক্সবাজারে হাতির আক্রমণে ৬২ জন মানুষ এবং বিভিন্ন কারণে ৩৩টি হাতি প্রাণ হারিয়েছে।

পরিবেশবাদীরা সতর্ক করে বলছেন, ‘এখনই ব্যবস্থা না নিলে আগামী ২০ বছরের মধ্যে কক্সবাজার থেকে বন্য হাতি বিলুপ্ত হতে পারে।’

কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বলেন, ‘আগে এখানে ১২টি করিডোর ছিল, এখন অর্ধেক বন্ধ। করিডোর পুনরুদ্ধার না করলে হাতিরা আর টিকবে না।’

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, হাতি-মানুষ সংঘাত নিরসনে দীর্ঘমেয়াদি, সমন্বিত ও বৈজ্ঞানিক পরিকল্পনা প্রয়োজন। করিডোর পুনরুদ্ধার, বনাঞ্চল রক্ষা, ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত ক্ষতিপূরণ, এবং স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে সচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।

বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ আলী রেজা খান বলেন, ‘গারো পাহাড়ে কতগুলো হাতি থাকতে পারে, আর কতগুলো বেশি আছে তা জরিপ করে পরিকল্পনা নিতে হবে। পাহাড়ে অভয়ারণ্য তৈরি করলে সংঘাত কমবে।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বন্যপ্রাণী গবেষক ড. মনিরুল এইচ খান বলেন, ‘রাঙামাটি পাহাড়ি বনে পর্যাপ্ত খাবার, কাপ্তাই লেকে পানির প্রাচুর্যতা এবং মানুষের বসতি তুলনামূলক কম হওয়ায় এলাকাটি হাতির আদর্শ বিচরণক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। আমরা যদি হাতি সংরক্ষণ করতে পারি স্থানীয়দের সম্পৃক্ত করতে হবে। এখানে হাতিকে র্দীঘমেয়াদে সংরক্ষণ করতে হলে দ্বন্দ্ব কমিয়ে আনতে হবে। হাতি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত ক্ষতিপূরণের আওতায় আনতে হবে। শেরপুর, চট্টগ্রাম বা কঙবাজারে মানুষের সঙ্গে হাতির যে দ্বন্দ্ব সংঘাত চলমান তা এখানে নেয়। বরকলের এই এলাকায় মানুষ ও হাতির দ্বন্দ্ব অনেকটায় কম।

Shera Lather
Link copied!