বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটির ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি কিছু উড়োজাহাজ মেরামতের পর আবার উড্ডয়ন করেছে, আবার কিছু গ্রাউন্ডেড হয়ে ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। এর ফলে যাত্রীদের নিয়মিত শিডিউল বিপর্যয়, বাতিল ফ্লাইট এবং অতিরিক্ত ভোগান্তি সহ্য করতে হচ্ছে।
বিষয়টি নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে বিমান কর্তৃপক্ষের রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়া ও নিরাপত্তা মান নিয়ে। গত এক মাসে দেশি-বিদেশি রুটে অন্তত নয়টি উড়োজাহাজে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে।
আবুধাবি, ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর ও কুয়ালালামপুরসহ একাধিক রুটে মাঝ আকাশে বা উড্ডয়নের আগে সমস্যা ধরা পড়েছে। কোথাও টয়লেট বিকল হয়েছে, কোথাও ইঞ্জিনে কম্পন বা ত্রুটি দেখা দিয়েছে, আবার কোথাও রানওয়েতে আটকে পড়েছে উড়োজাহাজ। এর ফলে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে, সংযোগ ফ্লাইট মিস হয়েছে এবং অনেকেই গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেননি।
১০ আগস্ট ইতালির রোমের লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি বিমানবন্দরে একটি বোয়িং ড্রিমলাইনার ডানার ফ্ল্যাপ ত্রুটির কারণে গ্রাউন্ডেড হয়। মেরামতের জন্য লন্ডন থেকে যন্ত্রাংশ আনা হয় এবং ২৬২ যাত্রীকে হোটেলে রাখা হয়।
১১ আগস্ট ড্যাশ-৮ মডেলের একটি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট কেবিনের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ওড়ার ২০ মিনিট পর ঢাকায় ফিরে আসে। আগস্টের শুরুর দিকে তিনটি ফ্লাইটে ত্রুটি দেখা দেয়। ৬ আগস্ট ব্যাংককগামী বোয়িং ইঞ্জিন কম্পনের কারণে ফিরে আসে, ৭ আগস্ট আবুধাবিগামী বোয়িং টয়লেট বিকল হয়ে ঢাকায় ফেরে এবং ৯ আগস্ট সিঙ্গাপুর থেকে ফেরার পথে আরও একটি বোয়িংয়ে সমস্যা দেখা দেয়।
গতকাল মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) ঢাকা থেকে কুয়েত ও দুবাইগামী দুটি ফ্লাইটও উড়োজাহাজ সংকটের কারণে বাতিল হয়েছে। ঢাকা-কুয়েত রুটের ফ্লাইটটি বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটে এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম-দুবাই রুটের ফ্লাইটটি বিকেল ৫টা ৫ মিনিটে বাতিল করা হয়। বিমান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উভয় ফ্লাইট আগামীকাল (১৩ আগস্ট) নতুন সময়সূচিতে পরিচালিত হবে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক এ বি এম রওশন কবীর জানিয়েছেন, যাত্রীদের নিরাপত্তা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পায়। যেকোনো যান্ত্রিক ত্রুটি সম্পূর্ণ সমাধান না হওয়া পর্যন্ত উড়োজাহাজ আকাশে ওঠে না। তিনি আরও বলেন, রোমে গ্রাউন্ডেড ড্রিমলাইনারটি মেরামতের পর উড্ডয়নের উপযোগী হবে।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের ঘটনা আকস্মিক নয়; ছোট ত্রুটিও বড় ঝুঁকিতে পরিণত হতে পারে। বিমান পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য ও বিশ্লেষক কাজী ওয়াহিদুল আলম উল্লেখ করেন, বহরের অধিকাংশ উড়োজাহাজ পুরোনো হওয়ায় সমস্যা নিয়মিত দেখা দেয়। তাই ত্রুটি আগে থেকে শনাক্ত করে সমাধান করা অত্যন্ত জরুরি।
নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, মান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষা এবং যোগ্য প্রকৌশলী ও পাইলট নিয়োগ ছাড়া সমস্যা মূলে রোধ করা যায় না। তিনি আরও বলেন, এই ধরনের সমস্যা প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বহরে ১৯টি উড়োজাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে ১৪টি যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং এবং ৫টি কানাডার ড্যাশ-৮ কিউ৪০০ মডেলের। বোয়িংগুলোর মধ্যে রয়েছে ৭৩৭-৮০০, ৭৭৭-৩০০ ইআর, ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার এবং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার।
বিমান সূত্র জানায়, যাত্রী ভোগান্তি কমাতে দুটি নতুন উড়োজাহাজ লিজ নেওয়ার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে রয়েছে এবং ভবিষ্যতে নতুন ক্রয় পরিকল্পনাও হাতে নেওয়া হয়েছে।
যাত্রীদের অভিযোগ, নিয়মিত ফ্লাইট বিলম্ব ও বাতিল হওয়ায় কর্মসূচি ব্যাহত হচ্ছে। সংযোগ ফ্লাইট মিস হওয়ায় অতিরিক্ত সময়ও খরচ হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি বহরের আধুনিকায়ন ও মান নিয়ন্ত্রণে যথাযথ নজর না রাখা হয়, তাহলে ভবিষ্যতেও এ ধরনের ঘটনা যাত্রীসেবার মান ও বিমান নিরাপত্তার ওপর প্রশ্ন তুলবে।