অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সাম্প্রতিক এক বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। পাঁচ তারকা হোটেলে গিয়ে খাবার খাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে দেওয়া ওই বক্তব্য ঘিরে সরকার পরিচালনার দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টাদের বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
সম্প্রতি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘রাতে আমার কাজ শেষ হতে কখনো কখনো ভোর হয়ে যায়। ওই সময় বাসায় খাবার দেওয়ার মতো কেউ থাকে না। তখন বেশির ভাগ সময় ৩০০ ফিটের নীলা মার্কেটে যাই। সেখানে হাঁসের মাংস ভালো পাওয়া যায়। তবে ভোর হয়ে গেলে সেটা বন্ধ থাকে। তখন ওয়েস্টিনে যাই।’
তার এ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে অনেকে প্রশ্ন তোলেন, সরকারের একজন উপদেষ্টা কীভাবে ব্যক্তিগত খরচে পাঁচ তারকা হোটেলে নিয়মিত খাবার গ্রহণ করেন? এ নিয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে।
প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা মন্ত্রী পর্যায়ের মর্যাদা পান এবং সেই অনুযায়ী তাদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা দেওয়া হয়। যদিও সংবিধানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা বা প্রধান উপদেষ্টার সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণে নির্দিষ্ট কোনো আইন নেই, তবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, তারা প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের সমান সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন।
সেই অনুযায়ী- প্রধান উপদেষ্টা পান মাসিক বেতন ১,১৫,০০০ টাকা, বাড়িভাড়া ১,০০,০০০ টাকা, দৈনিক ভাতা ৩,০০০ টাকা।
উপদেষ্টারা পান মাসিক বেতন ১,০৫,০০০ টাকা, দৈনিক ভাতা ২,০০০ টাকা, মাসিক নিয়ামক ভাতা ১০,০০০ টাকা ও স্বেচ্ছাধীন তহবিল ১০ লাখ টাকা।
এসবের বাইরেও মোবাইল ফোন কেনার জন্য ৭৫,০০০ টাকা, সরকারি খরচে সার্বক্ষণিক গাড়ি, ঢাকার বাইরে ট্যুরের জন্য অতিরিক্ত একটি জিপ গাড়ি (সব ব্যয় সরকার বহন করে), বাসাভাড়া না নিলে মাসিক ৮০,০০০ টাকা ভাড়া বাবদ অর্থ এবং বাড়ি ব্যবস্থাপনার অতিরিক্ত খরচ, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিফোনসহ সরকারি বাসভবনের যাবতীয় খরচ রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বহন করা হয়।
একজন উপদেষ্টা মন্ত্রীদের মতো উপসচিব পদমর্যাদার একজন একান্ত সচিব, সহকারী সচিব পদমর্যাদার একজন সহকারী একান্ত সচিব এবং ক্যাডারের বাইরে থেকে আরেকজন সহকারী একান্ত সচিব পান। এ ছাড়া জাতীয় বেতন স্কেলে দশম গ্রেডের দুজন কর্মকর্তা পান। আরও পাবেন একজন জমাদার ও একজন আর্দালি, দুইজন এমএলএসএস, একজন পাচক বা পিয়ন।
এ ছাড়াও তাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ভ্রমণ খরচ, বাসা-অফিস যাতায়াতের খরচ এবং অন্তত দুইজন গৃহকর্মীর ভ্রমণ ব্যয়ও সরকার বহন করে।