আসন্ন ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস এবং সাম্প্রতিক চারটি শিক্ষাবর্ষে জাতীয় নির্বাচনের তথ্য। পাঠ্যবইয়ে গণহত্যাকারী হিসেবে শেখ হাসিনার নাম যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে সংশ্লিষ্ট সূত্রে।
সোমবার (১৮ আগস্ট) রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসি) এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৈঠকে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির নতুন পাঠ্যবই অনুমোদন বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, উচ্চ মাধ্যমিকের পৌরনীতি ও সুশাসন বইয়ের দ্বিতীয় পত্রে ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনের প্রকৃত চিত্র অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এর মধ্যে সেনাসমর্থিত ২০০৮ সালের পাতানো নির্বাচন, ২০১৪ সালের ভোটের আগেই ১৫৪ জন প্রার্থীর বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়া, ২০১৮ সালের ভোটের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা এবং ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচন উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া মাধ্যমিকের বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে যুক্ত করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে যেসব প্রবন্ধ বা গল্পে এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, সেগুলো সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে।
পাঠ্যবই থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ বাদ দেওয়ার প্রস্তাব উঠলেও তা নাকচ করেছে এনসিসি।
তবে পূর্ণাঙ্গ নয়, সংক্ষিপ্ত আকারে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ে ভাষণটি রাখা হবে। এনসিটিবির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী বলেন, ‘আগেও ভাষণটি ছিল, এবারও থাকবে। তবে সংক্ষেপে।’
নবম-দশম শ্রেণির বাংলা বইয়ের ‘আমাদের নতুন গৌরব গাথা’ প্রবন্ধ নিয়ে সভায় অভিযোগ ওঠে, সেখানে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান আংশিক ও বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সভায় প্রবন্ধটির ভাষা ও শব্দাবলী সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। যেমন ‘শাসক’, ‘দুর্বৃত্তবাহিনী’ এবং ‘আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা’ শব্দগুলোর পরিবর্তে যথাক্রমে ‘স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনা’, ‘আওয়ামী লীগ’ এবং ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী’ ব্যবহারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
সভায় ‘রহমানের মা’ গল্পটি ধর্মীয় অনুভূতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিবেচনায় পাঠ্যসূচি থেকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। একইভাবে ‘স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা’ নাটকটিও বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে অশালীন ভাষার কারণে।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, পাঠ্যবইয়ে আর কোনো রাজনৈতিক দলের একক নেতাকে কেন্দ্র করে অতিরঞ্জিতভাবে ইতিহাস উপস্থাপন করা হবে না। আওয়ামী লীগকেন্দ্রিক অতিবন্দনা বাদ দেওয়ার সুপারিশও সভায় গৃহীত হয়েছে। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন ও ’৭১-পরবর্তী ঘটনাবলি উপস্থাপনে ঐতিহাসিক ভারসাম্য রক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। উচ্চ মাধ্যমিকের ইতিহাস, বাংলা দ্বিতীয় পত্র এবং পৌরনীতি ও সুশাসন বইয়ে এসব তথ্য সংযোজনের সুপারিশ চূড়ান্তভাবে গৃহীত হয়েছে।