ব্যবসায়িক কাজে ঢাকার বাইরে যাচ্ছিলেন এক যাত্রী। হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি নেমে এলো। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ডোমেস্টিক টার্মিনালে যাওয়ার রাস্তায় আটকে যায় তার গাড়ি। চোখের পলকে জমে ওঠা পানিতে ডুবে যায় বিএমডব্লিউটি। ব্যবসায়ী ভদ্রলোক বাধ্য হয়ে গাড়ির ছাদে দাঁড়ালেন। চালক ও বডিগার্ড তাঁকে কাঁধে নেওয়ার চেষ্টা করলেও কিছুই করার ছিল না। সেই ফ্লাইট ধরা আর সম্ভব হয়নি। ব্যবসায়িক পরিকল্পনা ভেস্তে গেল জলস্রোতের সঙ্গে।
এই দৃশ্যের ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল। কয়েক মিনিটের বৃষ্টিতে বিমানবন্দরের ভেতরের রাস্তাই পরিণত হয়েছে ছোট্ট নদীতে। ইঞ্জিনে পানি ঢুকে অসংখ্য গাড়ি বন্ধ হয়ে পড়ে। যাত্রীরা লাগেজ হাতে হেঁটে এগিয়েছেন টার্মিনালের দিকে। সড়কের পাশে খোলা গর্তে কেউ পড়ে গেলে কী ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারত, ভাবতেই শিউরে উঠতে হয়। সময়মতো টার্মিনালে পৌঁছাতে না পেরে অনেকেই ফ্লাইট মিস করেছেন।
ঢাকার এই জলাবদ্ধতার চিত্র নতুন নয়। নগরবাসীর ক্ষোভও তাই দীর্ঘদিনের। দেশ স্বাধীন হওয়ার অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় পেরোলেও রাজধানীর আধুনিক ড্রেনেজ ও স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা আজও অপ্রতুল। সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটুপানি থেকে কোমরপানি—চিরচেনা দুর্দশা। তাতে যাত্রী হোক বা শহরবাসী, কারো রেহাই নেই। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মতো কৌশলগত স্থানে যদি ১০ মিনিটের বৃষ্টিতে এমন অবস্থা হয়, তাহলে বাকি শহরের চিত্র কল্পনা করাই কঠিন।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নানা পদক্ষেপের কথা বললেও বাস্তবে পরিবর্তন তেমন দেখা যায় না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিকল্পনাহীন নগরায়ণই মূল সংকটের কারণ। বৃষ্টি ঢাকার জন্য নতুন নয়, কিন্তু পানি আটকে যাওয়ার পথ এখন আর নেই। ফলে যেকোনো ঝড়-বৃষ্টি মানেই যানজট, ফ্লাইট মিস, জনদুর্ভোগ।
প্রশ্ন একটাই—যে নগর প্রতিদিন লাখো মানুষের স্বপ্ন বহন করে, যে বিমানবন্দর দেশকে বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত রাখে, সেখানে মাত্র কয়েক মিনিটের বৃষ্টিতে যদি সবকিছু থমকে যায়, তবে উন্নয়নের বড়াই করেই বা লাভ কী? জলাবদ্ধতাকে সহনীয় পর্যায়ে আনার বাস্তবমুখী উদ্যোগ ছাড়া ঢাকার এই নগর দুঃস্বপ্ন কাটবে না।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী