অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক এমপি ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এইচ বি এম ইকবাল ও তার বড় ছেলে ইমরান ইকবালের বিরুদ্ধে মামলা করার অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
একইসঙ্গে ইকবালের স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শিল্পী ও ছোট ছেলে মঈন ইকবালের নামে সম্পদের অসংগতি পাওয়ায় তাদের কাছ থেকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশ চাওয়ার অনুমোদন দিয়েছে কমিশন।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, দুদক আইন অনুযায়ী ইকবাল ও তার বড় ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের বিষয়ে অনুসন্ধান অব্যাহত রাখার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এইচ বি এম ইকবালের নামে প্রায় ২৯৮ কোটি ৭০ লাখ টাকার সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে দায় বাদ দিলে নিট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১৬০ কোটি টাকা। ঘোষিত আয়ের তুলনায় তার ৬২ কোটি টাকার সম্পদ জ্ঞাত আয়ের উৎসের বাইরে পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে, বড় ছেলে ইমরান ইকবালের নামে ৪৫ কোটি টাকার সম্পদ পাওয়া গেছে, যার মধ্যে ৫ কোটি টাকার উৎস অস্পষ্ট। ফলে তাদের দুজনের বিরুদ্ধেই দুদক আইন ২০০৪-এর ২৭(১) ধারায় মামলা করার অনুমোদন দিয়েছে কমিশন।
দুদকের অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, ইকবালের স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শিল্পীর নামে ১০ কোটি ৮২ লাখ টাকার সম্পদ রয়েছে, যার মধ্যে ৩৭ লাখ টাকার উৎস অজানা। একইভাবে ছোট ছেলে মঈন ইকবালের নামে ৪৭ কোটি টাকার সম্পদ পাওয়া গেছে, যেখানে ৩১ লাখ টাকার আয় ও ব্যয়ের অসংগতি রয়েছে। এ কারণে তাদের কাছ থেকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ জারির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
২০২৪ সালের ১১ নভেম্বর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ইকবাল, তার স্ত্রী, তিন সন্তান ও জামাতার সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ইকবাল ওই জব্দ হিসাব থেকে ২৮৭ কোটি টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করলেও বিএফআইইউ তা ব্যর্থ করে দেয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর আর্থিক খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন শুরু করে। সে সময় স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে ২০২৫ সালের ১২ জানুয়ারি ইকবাল প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন।দুই দিন পর তার পদত্যাগ গ্রহণ করা হয়।
তার ছেলে মঈন ইকবালও ভাইস চেয়ারম্যান পদ ছাড়েন। পরে ইমরান ইকবাল চেয়ারম্যান হন, তবে ১৯ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক ‘সুশাসনের ঘাটতি’ দেখিয়ে প্রিমিয়ার ব্যাংকের বোর্ড বিলুপ্ত করে, যার ফলে ইকবাল পরিবারের ব্যাংকটির ওপর নিয়ন্ত্রণ শেষ হয়ে যায়।
দুদকের সহকারী পরিচালক মো. ফেরদৌস রহমানের নেতৃত্বে গঠিত একটি দল এই অনুসন্ধান পরিচালনা করে। কমিশন বলেছে, ইকবাল ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে পাওয়া তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং প্রয়োজন হলে নতুন মামলাও করা হতে পারে।
এইচ বি এম ইকবাল সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১০ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তার বিরুদ্ধে ব্যাংক খাতের অনিয়ম, সম্পদ গোপন এবং অর্থ পাচারের অভিযোগ ওঠে।