সম্প্রতি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বড় ধরনের সংস্কার উদ্যোগ হাতে নিয়েছে আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক। নিজস্ব বিশেষ অডিট কার্যক্রমের মাধ্যমে ব্যাংকটি ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময়ে নোয়াখালী ও সেনবাগ শাখায় প্রায় ১১ কোটি টাকার অনিয়মের প্রাথমিক তথ্য উদ্ঘাটন করেছে। ইতোমধ্যে দুটি বিশেষ অডিট টিম গঠন করা হয়েছে, যারা ঘটনাটির পূর্ণাঙ্গ তদন্তে কাজ করছে।
সোমবার (২০ অক্টোবর) বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দপ্তরে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বাহিনীর মহাপরিচালক ও আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ এই তথ্য জানান।
আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেন, আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তৃণমূল আনসার সদস্যদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে। কিন্তু অতীতে ব্যাংকটি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি- সুশাসন, স্বচ্ছতা ও প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ব্যাংকটিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
তিনি বলেন, অতীতে ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল মনিটরিং, অডিট তদারকি ও ঋণ প্রদানে কিছু ঘাটতি ছিল। বর্তমানে এসব ঘাটতি চিহ্নিত করে কোর ব্যাংকিং সিস্টেম (সিবিএস) প্রবর্তনের মাধ্যমে ব্যাংকটিকে পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল রূপান্তরের পথে নিয়ে যাচ্ছি। এর ফলে ভবিষ্যতে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী অনৈতিকভাবে ব্যাংকের সুবিধা নিতে পারবে না।
মহাপরিচালক বলেন, কর্মকর্তাদের পদোন্নতিতে এখন সততা, দক্ষতা ও আর্থিক স্বচ্ছতার অবদানকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংকের প্রশাসনিক ও আর্থিক কাঠামো আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালনের মাধ্যমে আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংককে একটি সুশাসনভিত্তিক, জনগণের আস্থাভাজন আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হবে। বাহিনীর অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের পরিচালনা পর্ষদে যুক্ত করার ফলে ইতোমধ্যে ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা দিয়েছে।
ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ অডিট টিম তদন্ত শেষে অনিয়মের পূর্ণাঙ্গ চিত্র প্রকাশ করবে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে, যাতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দ্রুত আইনি প্রক্রিয়ার আওতায় আনা যায়।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক বর্তমানে ২৫৯টি শাখার মাধ্যমে দেশের আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ব্যাংকটি এখন স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসনের নীতিতে পরিচালিত হয়ে একটি আধুনিক ও দক্ষ আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এগিয়ে চলেছে।
মতবিনিময় সভায় আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব মীর মোফাজ্জল হোসেনসহ বাহিনী ও ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন