ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫

জনস্বাস্থ্য-অর্থনৈতিক সুরক্ষায় শক্তিশালী তামাক আইন প্রয়োজন

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৯, ২০২৫, ০৮:৩১ পিএম
ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

সরকার ২০০৫ সালে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন পাস করে এবং ২০১৩ সালে আইনটিকে সংশোধনের মাধ্যমে শক্তিশালী করে। দুই দশক ধরে এই আইন বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতায় আইনটির কিছু দুর্বলতা চিহ্নিত হয়েছে এবং সময়ের সঙ্গে কিছু নতুন চ্যালেঞ্জ সামনে এসেছে। ফলে জনস্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক সুরক্ষার স্বার্থে শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন দেশের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদগণ।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা জানান তারা।

বিবৃতিতে মোট ১১ জন অর্থনীতিবিদ স্বাক্ষর করেন।

স্বাক্ষরকারীরা হলেন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. নাজমা বেগম, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর পরিচালক ড. মাসুদা ইয়াসমিন, একই বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান, অধ্যাপক ড. রুমানা হক, অধ্যাপক ড. অতনু রব্বানী, সহযোগী অধ্যাপক এসএম আব্দুল্লাহ, সহযোগী অধ্যাপক ড. সুজানা করিম, সহযোগী অধ্যাপক নাজমুল হুসাইন, ইন্সটিটিউট অব হেলথ ইকোনোমিকসের অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক জাহিদুল কাইয়ুম, স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সেলিনা সিদ্দিকা।

বিবৃতিতে অর্থনীতিবিদগণ বলেন, বাংলাদেশ সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়ায় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা। কিন্তু এই উদ্যোগকে ব্যহত করতে সিগারেট কোম্পানি বরাবরের মতো নানা বিভ্রান্তকর ও মিথ্যা প্রচারণা চলাচ্ছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত আইন ও নীতি প্রণয়ন ও সরকারের অন্যান্য পদক্ষেপকে ব্যহত করতে তামাক কোম্পানিগুলো সবসময় এ ধরনের অপকৌশল গ্রহণ করে থাকে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী হলে সরকারের রাজস্ব আয় কমে যাবে বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে সিগারেট কোম্পানিগুলো। তামাকজাত দ্রবের মূল্য ও কর বৃদ্ধির বিরোধিতা করতেও তারা একই কথা বলে থাকে। সিগারেট কোম্পানির এ ধরনের কাজের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং নাগরিকদের জন্য প্রকৃত তথ্য তুলে ধরছি।

বিবৃতিতে তারা বলেন, বাংলাদেশে ২০০৫ সালে যখন তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস হয়, সে বছর তামাক খাত থেকে রাজস্ব আয় ছিল ২ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। পরবর্তী অর্থবছর ২০০৫-০৬-এ রাজস্ব আদায় হয় ৩ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা। পরবর্তী বছরগুলোতে এই বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকে। ২০১৩ সালে সরকার আইনটি সংশোধনের মাধ্যমে অধিকতর শক্তিশালী করে। সে বছর তামাক থেকে সরকারের রাজস্ব আয় ছিল ১০ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা এবং অদ্যবধি এই বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ (২০২৪-২৫) অর্থবছরে তামাক খাত থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে মোট ৪০ হাজার ৪১১ কোটি টাকা। অতএব এটা পরিষ্কার যে তামাক নিয়ন্ত্রণ হলেও তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও করহার বাড়ানো হলে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ে এবং তামাক ব্যবহার কমার মাধ্যমে রোগ ও মৃত্যু কমে।

তামাকজনিত ক্ষতি সম্পর্কে তারা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটির সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২৪ সালে তামাক ব্যবহারের কারণে স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ব্যয় ছিল ৮৬ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে ৬৫ হাজার কোটি টাকাই তামাকজনিত স্বাস্থ্যব্যয়। একই সময়ে তামাক থেকে রাজস্ব আয় ছিল ৪০ হাজার কোটি টাকা, যা তামাক ব্যবহারের কারণে হওয়া অর্থনৈতিক ক্ষতির অর্ধেকেরও কম। দেশে তামাক ব্যবহারজনিত রোগের চিকিৎসা খরচ যোগাতে গিয়ে প্রতিবছর দেশের প্রায় ৪ লক্ষ মানুষ দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে।

তামাক কোম্পানি সবসময় এসব তথ্য আড়াল করতে চায়। তারা একটি প্রাণঘাতী পণ্যের ব্যবসা করে মুনাফা অর্জনের জন্য। মানুষের মৃত্যু বা ক্ষতি তাদের বিবেচ্য নয়। মিথ্যাচারের মাধ্যমে তারা প্রকৃত সত্যকে আড়াল করছে। শিশু-কিশোরদের তামাকের নেশায় আকৃষ্ট করতে তারা বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ধূমপানের স্থান তৈরি করে দিচ্ছে, মূল্য বৃদ্ধি ও খুচরা শালা বিক্রি বন্ধের উদ্যোগকে ব্যহত করছে, বিক্রয় স্থলে আগ্রাসী বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, দেশে ভেপিং ও ই-সিগারেটের ব্যবহার বাড়াতে যুবকদের নিয়ে গোপনে ভেপিং মেলার আয়োজন করছে, আইন শক্তিশালি করতে কার্যকর প্রস্তাবসমূহের বিরোধিতা করছে, যা তরুণ প্রজন্মকে তামাকে আসক্ত করার মাধ্যমে স্বাস্থ্য ধ্বংসের পায়তারা বলেও বিবৃতিতে জানিয়েছেন তারা।

এ অবস্থায় সিগারেট কোম্পানির ভ্রান্ত প্রচারণা থেকে নীতি নির্ধারকদের সতর্ক থাকা এবং দেশের মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষায় অবিলম্বে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন সংশোধনের মাধ্যমে শক্তিশালী করতে পদক্ষেপ গ্রহণ এবং দেশে একটি কার্যকর ও টেকসই তামাক কর ব্যবস্থা প্রবর্তণের জন্য একটি কমপ্রিহেন্সিভ তামাক কর নীতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদগণ।