ঢাকা বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

‘মোন্থা’র প্রভাবে তিনদিন ভারি বৃষ্টির আভাস, বাড়বে নদ-নদীর পানি

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৯, ২০২৫, ০৬:২৬ পিএম
আগামী কয়েকদিন উজানে ভারতের প্রদেশগুলো এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর ও বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র । ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

ঘূর্ণিঝড় মোন্থার প্রভাবে আগামী কয়েকদিন উজানে ভারতের প্রদেশগুলোতে বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পেতে পারে। একই সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরেও ভারি বৃষ্টি হতে পারে, যার ফলে আগামী কয়েকদিন দেশের নদ-নদীগুলোর পানি বাড়তে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর ও বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ উপকূল অতিক্রম করেছে। এটি দুর্বল হয়ে ঘূর্ণিঝড় ও পরবর্তীতে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে বর্তমানে অন্ধ্র প্রদেশ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এবং আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে এটি ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে পারে।

যদিও বিগত ২৪ ঘণ্টায় দেশের অভ্যন্তরে এবং উজানে ভারতের প্রদেশসমূহে উল্লেখযোগ্য ভারি বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হয়নি। আগামীকালও (২৯ অক্টোবর ৯টা থেকে ৩০ অক্টোবর ৯টা পর্যন্ত) দেশের অভ্যন্তরে এবং সংলগ্ন উজানে ভারতের প্রদেশসমূহে উল্লেখযোগ্য ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কম।

তবে পরবর্তী ৩ দিন তথা আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) ৯টা থেকে রোববার (২ নভেম্বর) ৯টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগে এবং তৎসংলগ্ন উজানে ভারতের মেঘালয়, আসাম, পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিম প্রদেশে বিচ্ছিন্নভাবে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

বুধবার বিকেলে (২৯ অক্টোবর) কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হানের দেওয়া নদী অববাহিকাসমূহের পানি সমতল সম্পর্কিত বিশেষ বার্তায় বলা হয়, যার প্রেক্ষিতে উত্তরাঞ্চলীয়, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় নদী অববাহিকাভুক্ত নদীসমূহের পানি সমতল ওই তিনদিন পর্যন্ত দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।

এই নদ-নদীগুলো হলো: তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, আপার-করতোয়া, আপার-আত্রাই, আত্রাই, পুনর্ভবা, টাঙ্গন, মহানন্দা, যমুনেশ্বরি, করতোয়া, ঘাঘট, জিঞ্জিরাম, ভুগাই-কংস ও সোমেশ্বরী। 

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সবশেষ বুধবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরের তথ্যানুযায়ী, সকল প্রধান নদ-নদীসমূহের পানি সমতল বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ক. চিত্রে ক্রমপুঞ্জিভূত আগামী ৪ দিনের ইউরোপীয় আবহাওয়া সংস্থা (ইসিএমডব্লিউএফ) ও খ. চিত্রে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস। ছবি-  বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র, বাপাউবো

কেন্দ্রের সহকারী প্রকৌশলী (দায়িত্বরত কর্মকর্তা) মো. মাহমুদুল ইসলাম শোভনের পাঠানো প্রধান অববাহিকার তথ্যে বলা হয়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীসমূহের পানি সমতল আগামী ৫ দিন স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।

এ ছাড়াও গঙ্গা-পদ্মা নদীসমূহের পানি সমতল আগামী ২ দিন হ্রাস পেতে পারে; পরবর্তী ৩ দিন স্থিতিশীল থাকতে পারে; এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। সুরমা-কুশিয়ারা নদীসমূহের পানি সমতল আগামী ৩ দিন হ্রাস পেতে পারে।

এদিকে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বুধবার সকালে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আকাশ আংশিক মেঘলা থেকে অস্থায়ীভাবে মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। দিনের কিছু সময় হালকা বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

একই সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ আরও ঘনীভূত হতে পারে, যার প্রভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টির মাত্রা বাড়বে এবং তাপমাত্রা আরও কিছুটা হ্রাস পাবে।

বুধবার সকাল ৬টায় ঢাকায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর্দ্রতা ৯১ শতাংশ। গতকাল রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর আজকের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তবে গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাতে প্রকাশিত সারা দেশের সম্ভাব্য পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, আজ বুধবার সারা দেশে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে।

বিশেষ করে রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহের কিছু অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল।

বুধবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।

ভারত ও বাংলাদেশে ২৪ ঘণ্টার উল্লেখযোগ্য বারিপাত তথ্য এবং দেশের নদ-নদীর অবস্থা (পর্যাবেক্ষণাধীন পানি সমতল স্টেশনের তথ্য)। ছবি- বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র, বাপাউবো

আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়; খুলনা ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ও ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা (১-২) ডিগ্রি সে. কমতে পারে।

আগামী শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়; রাজশাহী, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আগামী শনিবার (১ নভেম্বর) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আগামী রোববার (২ নভেম্বর) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।