রাজনৈতিক দলগুলোর ‘আমার লোক, তোমার লোক’ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, এই সংস্কৃতি শুধু আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা জামায়াতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং ছোট দল ও নাগরিক সমাজের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে।
শনিবার (১ নভেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমার লোক, তোমার লোক’- এই কালচার থেকে বিএনপি, জামায়াতসহ সব দলকেই বের হয়ে আসতে হবে। এনসিপি ও অন্যান্য ছোট দলগুলোও এই ব্যাধি থেকে মুক্ত নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার লোক, তোমার লোক’ সংস্কৃতির ভয়াবহতা সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে আওয়ামী লীগ আমলে। গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, হেফাজতে নির্যাতন, ভুয়া নির্বাচন, দলীয়করণ- সবকিছুর সূত্রপাত আওয়ামী লীগের সময়েই হয়েছে। পরবর্তী সরকারগুলো কেবল সেটি চালিয়ে গেছে।’0
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ‘নির্মম, অত্যাচারী, পাশবিক ও দানবীয় বাহিনী’তে পরিণত করা হয়েছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
পুলিশি নির্যাতনের প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল বলেন, অনেক পুলিশ কর্মকর্তা সরকারি দলের নির্দেশে নির্যাতন চালান। আবার কেউ কেউ নিজের স্বভাব বা লোভের কারণে করে- ক্ষমতা দেখাতে বা টাকা বানাতে।
এ সময় তিনি সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদকে এমন ‘স্বভাবজাত’ কর্মকর্তার উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতা ও ফরেনসিক সুবিধার ঘাটতিকে পুলিশি অত্যাচারের অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেন আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, অপরাধ স্বীকার করানোর জন্য নির্যাতন এখন আমাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের পুলিশ সংস্কার উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি জানান, একটি পুলিশ সংস্কার কমিশন ও পুলিশের মধ্যেই নিবেদিত তদন্ত দল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সরকারের পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে- ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন করে আটক ব্যক্তির স্বজনদের ১২ ঘণ্টার মধ্যে জানানো বাধ্যতামূলক করা, এবং গুম সংক্রান্ত আইনে সংশোধন এনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জানাতে ব্যর্থ হলে সেটি ‘গুম’ হিসেবে গণ্য করার বিধান।
ক্ষমতা কাঠামো দুর্বল হওয়ার সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতা থাকলেই যে মানবাধিকার রক্ষা হবে, তা নয়- সংস্কৃতিগত পরিবর্তনই মূল বিষয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রশাসনে এমন কিছু মানুষ আছে যাদের কাজই হলো ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়া। এই মানসিকতা পরিবর্তন না হলে প্রকৃত সংস্কার সম্ভব নয়।’
এ গোলটেবিল বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম, সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা, পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতির সভাপতি এম আকবর আলী এবং মানবাধিকার কর্মী নূর খান।
এছাড়া রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের এবং পুলিশের অতিরিক্ত আইজি কাজী মো. ফজলুল করীম অংশ নেন।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন