ঢাকা শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৫

শিল্পবর্জ্যের বিষাক্ত পানিতে ১৫ বছরে ৩৩৬ একর কৃষিজমি অনাবাদি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ
প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২৫, ০৪:৫৪ পিএম
ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ময়মনসিংহের ভালুকার ভরাডোবা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে বিভিন্ন ডাইং মিল থেকে গত ১৫ বছর যাবৎ নেমে আসা বিষাক্ত বর্জ্যের কারণে ৩৩৬ একর জমিতে বোরো আবাদ বন্ধ থাকায় কৃষকের ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলার ভরাডোবা গ্রামে মুলতাজিম মিল ও পাকিস্তানি মিল হিসেবে পরিচিত এক্সপিরিয়েন্স টেক্সটাইল মিল নামে ডাইং ফ্যাক্টরি হতে গত দেড় দশক ধরে বর্জ্য মিশ্রিত কালো পানি স্থানীয় খাল-বিলে নামার কারণে কয়েকটি গ্রামের শত শত চাষির বোরো আবাদ বন্ধ রয়েছে। এসব মিলের বর্জ্য পানি নেমে তরফদারবাড়ী সংলগ্ন কাকাচড়া বিল, সাধুয়া বিল, খুরোলিয়া বিল, তালতলা, কেচুরগোনা, মেলেন্দা, দক্ষিণ ভরাডোবার হায়রা বিল, তেইরা বিলসহ পুরুড়া ও ভাঁটগাঁও গ্রামের একাধিক বিলের পানি নষ্ট হওয়ায় বোরো আবাদ বন্ধ রয়েছে বলে চাষিরা জানায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভরাডোবা গ্রামের একজন কৃষক জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ পাকিস্তানি ও মুলতাজিম মিলের দূষিত পানি বিলে নেমে তাদের বোরো জমি তলিয়ে থাকায় বোরো আবাদ করতে পারছেন না। অপরদিকে বর্জ্যমিশ্রিত দূষিত কালো পানি নিচের স্তরে গভীরে নলকূপের পানির সাথে মিশে খাবার পানি অনিরাপদ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এলাকার কতিপয় স্বার্থান্বেশী ব্যক্তির মদদে মিল কর্তৃপক্ষ তাদের ইচ্ছেমতো স্থানীয় খাল-বিলে বর্জ্য ফেলে কৃষকের ফসল নষ্টসহ পরিবেশ ধ্বংস করে চলেছে। পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ-ব্যধিতে প্রায়ই এলাকার মানুষ আক্রান্ত হয়।

ভরাডোবা ডিমাইল পাড়ার এক চাষি জানান, বিলের কালো কুচকুচে পানিতে নামলে শরীরে আলকাতরার মতো লেগে চুলকাতে থাকে। ধান রোপণ করলে গোছা বড় হয়ে গোড়া পচে গাছ মরে যায়। দীর্ঘদিন কালো পানিতে বিলে কচুরিপানায় ছেয়ে গেছে। বর্জ্য পানির বিষাক্ত দুর্গন্ধে বাড়িঘরে টিকে থাকা দুর্বিসহ হয়ে যায়। বর্জ্য পানি বন্ধের দাবিতে এলাকার শত শত কৃষক প্রতিবাদ আন্দোলন করে বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েও স্থায়ী সমাধান পাননি।

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, ভরাডোবা ইউনিয়নের কয়েকটি ডাইং মিলের বর্জ্যের কারণে দীর্ঘদিন ধরে শত শত কৃষকের বোরো আবাদ বন্ধ রয়েছে। এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পক্ষ হতে বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে বিষয়টি তদন্তের জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমিকে প্রধান করে উপজেলা কৃষি অফিসার, মৎস্য অফিসার, সমাজসেবা অফিসার, ৪টি মিলের প্রতিনিধি ও কৃষক প্রতিনিধি রহুল আমিনসহ একটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়।

তদন্ত কমিটি গত ৯ জুলাই হতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও মিল কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে পরপর চার দফা গণশুনানি করে। এতে ভরাডোবা ইউনিয়নের ভরাডোবা, পুরুড়া, রাংচাপড়া ও ভাঁটগাঁও গ্রামের কৃষি ব্যাংকে মোট ৩৩৫ দশমিক ৭৪ একর জমি অনাবাদী হিসাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। এতে উৎপাদন ব্যয় ছাড়াই প্রতি একর জমির জন্য বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ ৬৬ হাজার টাকা ধার্য করা হয়। গত ১৫ বছরে মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩৩ কোটি ২৮ লাখ ১০ হাজার টাকার মতো। তদন্ত কমিটির দেওয়া সুপারিশে কৃষকের ক্ষতিপূরণের টাকা শতকরা ২৫ ভাগ মুলতাজিম মিল ও ৭৫ ভাগ টাকা এক্সপিরিয়েন্স মিল কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করবে। কৃষকদের ক্ষতিপূরণের টাকা মিল কর্তৃপক্ষ পরিশোধ না করায় তারা পুনরায় ২৯ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান।

উপজেলা নির্বাাহী কর্মকর্তা হাসান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, মিল কর্তৃপক্ষের সাথে বসে বিষয়টি ফয়সালার চেষ্টা চলছে। ফয়সালা সম্ভব না হলে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।