বাংলাদেশের প্রটোকল বা ‘অর্ডার অব প্রিসিডেন্স’ অনুযায়ী, অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (ভিভিআইপি) হিসেবে শুধু রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ দুই পদাধিকারীকে গণ্য করা হয়। তারা হলেন- রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। এ ছাড়াও ভিভিআইপি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত বিদেশি রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানগণ, যখন তারা বাংলাদেশ সফর করেন। তবে সরকার যদি মনে করে কোনো ব্যক্তি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, তাহলে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে তাদের ভিভিআইপি মর্যাদা দিতে পারে।
গতকাল সোমবার (১ ডিসেম্বর) বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকরের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিটি সংস্থাকে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। পরে যমুনার সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে সরকারের সিদ্ধান্ত জানান পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। এ সময় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
কারা ভিভিআইপি
রাষ্ট্রের উচ্চপদে আসীন এবং গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারণ ও প্রশাসনিক কাজে জড়িত ব্যক্তিদের সরকারের ভিভিআইপি হিসেবে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়। এর মধ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বা সমমর্যাদার ব্যক্তিরা রয়েছেন। এর বাইরেও প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে সরকার ভিভিআইপি ঘোষণা করে থাকে।
বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী আইন, ২০২১-এর ২ ধারায় উল্লেখ রয়েছে, ‘ভিভিআইপি’ অর্থ সরকার কর্তৃক, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান এবং এই আইনের উদ্দেশ্যসমূহ পূরণকল্পে, অনুরূপ ব্যক্তি বলিয়া ঘোষিত অন্য কোনো ব্যক্তিও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবেন।’
যেভাবে ভিভিআইপি ঘোষণা করা হয়
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়- বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়- প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই ঘোষণা দেয় যে, কারা সরকারের ভিভিআইপি হিসেবে বিবেচিত হবেন। তবে, পদাধিকার বলের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সেটা আলাদা করে প্রয়োজন হয় না।
ভিভিআইপিরা কী সুবিধা পান
বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী আইন, ২০২১ অনুযায়ী, ভিভিআইপিদের নিরাপত্তা বিধান করা এই বাহিনীর অর্থাৎ এসএসএফের দায়িত্ব। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ছাড়াও আইনের ৮(২) ধারা মোতাবেক, এসএসএফ ‘বাহিনী বাংলাদেশে অবস্থানরত অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকেও দৈহিক নিরাপত্তা প্রদান করিবে।’ অর্থাৎ, সরকারের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ঘোষিত হলে তার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে এসএসএফ নিয়োজিত হবে এবং তার ‘নিরাপত্তার বিঘ্ন ঘটাইতে পারে এইরূপ গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও আদান-প্রদান করিবে এবং তাহাদিগকে দৈহিক নিরাপত্তা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।’
অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নিরাপত্তার জন্য কাউকে ক্ষতিকর মনে হলে এসএসএফ তাকে বিনা গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় গ্রেপ্তারও করতে পারে এবং তাদের এই ক্ষমতা দেশের সব প্রান্তে প্রযোজ্য। শুধু তাই নয়, পরিস্থিতি বিবেচনায় তাকে গুলি অথবা হত্যাও করতে পারবে।

