পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সপ্তম অধিবেশন (UNEA-7)–এ জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্য ক্ষয় এবং দূষণ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দৃঢ় ও পর্যাপ্ত অর্থায়ন নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, ‘পর্যাপ্ত সম্পদ ও প্রযুক্তি সহায়তা ছাড়া জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো এই সংকট মোকাবিলা করতে পারবে না। সহায়তার অভাবে সরকারগুলোকে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাত থেকে অর্থ সরিয়ে দুর্যোগ মোকাবিলায় ব্যয় করতে হয়, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করে।’
তিনি UNEA-7–কে বহুপাক্ষিক পরিবেশ চুক্তির মাধ্যমে সমন্বিত ও সুষমভাবে সম্পদ আহরণে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিদিনের বাস্তবতা।’ চরম তাপদাহ, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং নদীভাঙনের কারণে লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে এবং গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ড. ফারহিনা উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ বৈশ্বিক নিঃসরণের মাত্র ০.৫ শতাংশেরও কম অবদান রেখে জলবায়ু নেতৃত্ব দিচ্ছে। দেশের উন্নত এনডিসি ৩.০–এ ২০৩৫ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ২৫ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (ন্যাপ-২০২৩) বাস্তবায়ন এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় স্থানীয়ভাবে নেতৃত্বাধীন অভিযোজন কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।
জীববৈচিত্র্য হ্রাসের বিষয়েও সচিব জানান, বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের সীমিত ভূমিতে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি জাতীয় জীববৈচিত্র্য কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা (২০২৬–৩০), জাতীয় সংরক্ষণ কৌশল, রামসার কৌশলগত পরিকল্পনা (২০২৬–৩০), ভূমি অবক্ষয় নিরপেক্ষতা লক্ষ্য (এডিএন-২০২৩০) এবং অন্যান্য নীতিমালার অগ্রগতি তুলে ধরেন।
দূষণ মোকাবিলায় বাংলাদেশ পাতলা পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধকারী বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। তিনি বলেন, ‘দৃঢ় নীতি ও জনসমর্থন থাকলে উচ্চাকাঙ্ক্ষা সফল হয়।’
দেশটি ইতোমধ্যে কঠিন বর্জ্য, ই-বর্জ্য, চিকিৎসা বর্জ্য, ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য ও জাহাজভাঙা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য পৃথক বিধিমালা প্রণয়ন করেছে। এছাড়া প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বর্ধিত উৎপাদক দায়বদ্ধতা (ইপিআর) নির্দেশিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং কিছু একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।
ড. ফারহিনা UNEA-7–কে রাসায়নিক ও প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনা, প্রতিরোধ, নিরাপদ বিকল্প এবং সার্কুলারিটি নিশ্চিত করে জীবনচক্রভিত্তিক সমন্বিত পদ্ধতি গ্রহণের আহ্বান জানান এবং অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার গুরুত্বও তুলে ধরেন।

