বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


তরিক শিবলী

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২৫, ১০:৪০ এএম

বিদেশি প্রতারকদের স্বর্গরাজ্য উত্তরা

তরিক শিবলী

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২৫, ১০:৪০ এএম

ছবি:  রূপালী বাংলাদেশ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

রাজধানীর উত্তরায় বিদেশি প্রতারকদের একাধিক চক্র গড়ে উঠেছে। প্রতারক চক্রের সদস্যরা প্রধানত আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিক। তারা অনলাইন প্রতারণাসহ নানা ধরনের আর্থিক অনিয়মে জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

অবশ্য এসব চক্রের সঙ্গে বাংলাদেশের নাগরিকেরাও যুক্ত। তারা দেশে বা বিদেশে থেকে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের প্রতারণায় সহায়তা করেন। কেউ কেউ চক্রের নেতৃত্বও দেন।

জাহিদ হাসান নামে উত্তরায় বসবাসরত এক ব্যক্তি বলেন, রিচপ্র নামে একটি প্রতিষ্ঠান অনলাইনে আমাকে প্রথম আবেদন জানায়। পরে আমি তাদের অফিসে যাই। দিয়াবাড়ি অফিসে আমাকে বেশ আপ্যায়ন করা হয়। 

আমি এক বিদেশি ব্যক্তিকে দেখে তার কথা শুনে বেশ খুশি হই। মাত্র ১১ হাজার টাকা প্রদান করে আমি হতে পারি সারা জীবনের জন্য একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ী। তিন মাস পরে ওই প্রতিষ্ঠানের আর কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাইনি।

উত্তরা দিয়াবাড়ি মেট্রো রেলের উত্তরা উত্তর স্টেশনের সামনেই আটতলা ভবনের চারতলায় কোরিয়ান এক কোম্পানি রয়েছে, যেটি বিদেশি নাগরিক দ্বারা পরিচালিত হয় এবং মাত্র ১২ হাজার টাকার অর্গানিক ফুড কিনলে সারা জীবন এই প্রতিষ্ঠান থেকে আপনি পাবেন পেনশন স্কিম। 

প্রতি মাসে পাবেন ৫ হাজার টাকা করে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে রূপালী বাংলাদেশের প্রতিনিধি ওই ভবনে প্রবেশ করলে স্যুট-প্যান্ট পরা অনেক ব্যক্তি ছিলেন-সবাই বাংলাদেশি। বিদেশি নাগরিকের খোঁজ-খবর নিতে চাইলে বলেন তারা ভেতরে আছেন।

পরবর্তীতে বিদেশি নাগরিক কাজি আমিও তৌসি বাংলা কথা বোঝেন না বলে তিনি আমাদের কোনো কথারই উত্তর দেননি। তার দোভাষী ছুটিতে আছেন বলে আমাদের প্রতিষ্ঠানের আরেক কর্মকর্তা শাহ আলম জানান।

প্রতিষ্ঠানটি এমএলএম ব্যবসার মতো পরিচালিত হয় বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য রূপালী বাংলাদেশ পত্রিকার প্রতিবেদককে আর্থিক প্রলোভন দেখানোর চেষ্টা করেন। 

৯ নম্বর সেক্টরে একটি ভবন পুরোটাই চাইনিজ ব্যবসায়ীরা ভাড়া নিয়ে রেখেছেন। ভেতরে প্রবেশ করা সম্পূর্ণ নিষেধ। তাদের ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স থেকে শুরু করে কোনো কিছুই কর্তৃপক্ষ দেখাতে পারেনি। 

বিদেশি নাগরিক এ দেশে সরাসরি কীভাবে ব্যবসা করে, তা জানতে চাইলে তারা বলেন, চাইনিজরা কীভাবে ব্যবসা করেন, সেটা আমরা জানি না এবং আপনাদের কাউকে আমরা ভেতরে যেতে দিতে পারব না। 

উল্লেখ্য, এই ভবনে এখন পর্যন্ত দু-তিনবার পুলিশ রেইড দিয়েছিল, তবে ৫ আগস্টের পর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দুর্বল হয়ে যাওয়ায় এখন পর্যন্ত কোনো বিদেশি নাগরিক উত্তরা পশ্চিম থানায় গ্রেপ্তার হয়নি।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ সাত মাস আগে উত্তরায় ইমরান হাসান ওরফে ইকবাল, মো. নাজমুল হক রনি, মোসা. নুসরাত জাহান, ছিডি (নাইজেরিয়ান), ইম্যানুয়েল (নাইজেরিয়ান), উইলসন ডা (অ্যাঙ্গোলিয়ান), নিগুয়েনি পাপিনি (ক্যামরুনিয়ান), জনকে (নাইজেরিয়ান) গ্রেপ্তার করে।

গত বছর উত্তরা থেকে বাংলাদেশ র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের মাধ্যমে আটক করা হয় ১১ জনকে। আটক ১১ জনের মধ্যে পাঁচজন আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিক এবং ছয়জন বাংলাদেশি। 

এই চক্রের মূল হোতা বিপ্লব নামের একজন বাংলাদেশি নাগরিক। এই চক্র বাংলাদেশি নাগরিকদের সঙ্গে অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্ধুত্ব করে দামি উপহার ও ডলার পাঠানোর নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলে পুলিশ জানায়। 

তারা তাদের ফেসবুক আইডিতে বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের বিশেষ করে ইউরোপ-অ্যামেরিকার নাগরিকদের ছবি ব্যবহার করে। একপর্যায়ে পার্সেলের মাধ্যমে দামি উপহার, ডলার পাঠানোর কথা বলা হয়। 

প্রতারক চক্রের সদস্যরা আবার বাংলাদেশে নিজেদের কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয়ে ওই দামি পার্সেল ছাড় করানোর জন্য মাশুল হিসেবে টাকা আদায় করত। তাদের কাছ থেকে পুলিশ কাস্টমস কর্মকর্তার ভুয়া পরিচয়পত্রও উদ্ধার করেছে। 

আবার কথিত ডলার পাঠিয়ে তা গ্রহণ করতে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করত। পার্সেলের ডলার গ্রহণ না করলে মামলার ভয়ভীতিও দেখাত। তারা ১০ বছর ধরে এই প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা আয় করেছে বলে দাবি করেন র‌্যাবের মিডিয়া উইংসের সাবেক দায়িত্বশীল সারোয়ার আলম। তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার কথা বলেও প্রতারণা করে আসছিল। উত্তরায় বিদেশি নাগরিকদের প্রতারণা দিন দিনে বাড়ছে। 

৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশ পুলিশের পুরোপুরিভাবে কার্যকর হতে এখনো কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতারক চক্র আরও বেশি সক্রিয় হয়ে পড়েছে। দেশীয় মানুষকে ব্যবহার এবং বিদেশি চেহারা প্রদর্শনের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে। 

পুরো উত্তরায় প্রায় ছয়টি এমএলএম কোম্পানি এবং বিভিন্ন প্রতারণামূলক প্রতিষ্ঠান নামে-বেনামে বিদেশি নাগরিকদের পরিচয়ে ওয়েবসাইট খুলে প্রতারণামূলক ব্যবসা করে আসছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের হাতে এখন অনেক কাজের চাপ রয়েছে, বিষয়টি সত্য। দীর্ঘদিন যাবৎ বিদেশি নাগরিকদের ওপর তেমন কোনো তদারকি হচ্ছে না; তবে খুব শিগ্গির আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
 

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!