শনিবার, ২৮ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সালমান ফরিদ, সিলেট

প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০২৫, ১২:৪২ পিএম

বিএনপি নেতার কবজায় ২৫ কোটি টাকার সম্পত্তি

সালমান ফরিদ, সিলেট

প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০২৫, ১২:৪২ পিএম

বিএনপি নেতার কবজায় ২৫ কোটি টাকার সম্পত্তি।   ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

বিএনপি নেতার কবজায় ২৫ কোটি টাকার সম্পত্তি। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

২৫ কোটি টাকার মৌরসি সম্পত্তি জবরদখলের অভিযোগ উঠেছে সিলেট বিএনপির এক নেতা বেলাল আহমদের বিরুদ্ধে। তিনি মহানগর বিএনপির সহ-প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক ও মহানগর যুবদলের সহসভাপতি। ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের সুযোগে তিনি একটি মার্কেটসহ প্রতিবেশীর ৮৪ ডিসিমেল জায়গা দখল করে নিয়েছেন- এমনটাই অভিযোগ করেছে সম্পত্তির মালিক দাবিদার পক্ষ। তিনি জমির প্রকৃত মালিককে ঘায়েল করতে নিজের দলের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকে বানিয়েছেন ‘ফ্যাসিস্ট দোসর’!

‘আফরোজ ম্যানশন’ নামে ওই মার্কেট সিলেট মহানগরীর কদমতলী এলাকায় অবস্থিত। মার্কেটে আছে ২৬টি দোকান। সব মিলিয়ে যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ২৫ কোটি টাকা। দখলের পর এই মার্কেটের গেটের ওপর বসিয়ে দেওয়া হয়েছে, ‘মাহমুদ কমপ্লেক্স-২’ নামে একটি নেমপ্লেটও।

মালিক পক্ষের অভিযোগ, বেলাল তাদের ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর সাজিয়ে গত ২৮ মার্চ জায়গাটি জবরদখল করেন।

জায়গার মালিক তাজুল ইসলাম টিপু বক্স জানান, তার দাদার আমলের এই সম্পত্তি হলেও মায়ের পক্ষের মৌরসি জায়গা বলে বেলাল আহমদ মার্কেটসহ জায়গা দখল করে নেন। তাকে বলছেন আওয়ামী লীগের দোসর। অথচ তিনি নিজেও বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত।

বর্তমানে সিলেট মহানগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির নির্বাহী সদস্য। একসময় ছিলেন ২৭ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক।

অবশ্য বেলাল আহমদের দাবি, জায়গাটি তাদের নানাবাড়ি থেকে পাওয়া। বতর্মানে তার মা ও মামাদের নামে দলিলও আছে। ‘ফ্যাসিস্ট দোসর’ টিপু বক্সরাই তাদের জায়গা দখল করে রেখেছিলেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে তারা সেটি বুঝিয়ে দিয়েছেন। পরে আবার সেই জায়গা দখলে নিতে তারাই আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছেন। এ হামলায় আমি এখন হাসপাতালে ভর্তি।

দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি মিজানুর রহমান সম্পত্তি নিয়ে হামলা-মামলার সত্যতা স্বীকার করেন। বলেন, বিষয়টি এখন আদালতে। দুপক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

টিপু বক্সের মা কয়েক দিন আগে একটি অভিযোগ দিয়েছেন, কিন্তু আদালতে মামলা চলমান থাকায় সেখানে আমাদের কিছু করার নেই বা ছিলও না।

অভিযোগকারী টিপু বক্স বলেন, নিজের দলীয় পদ-পদবি ও প্রভাব বিস্তার করে বেলাল আহমদ দলবল নিয়ে এই জায়গা দখল করেন। তার পেশিশক্তির কারণে আমরা নিজেদের সম্পত্তিতে যেতে পারি না। নানা জায়গায় অভিযোগ দিয়েও সুবিচার পাইনি। উল্টো আমাদের ওপর হামলা-মামলা করা হয়েছে।

তিনি জানান, মৌরসি সূত্রে পাওয়া এই সম্পত্তির মালিক তারা। তার দাদা জায়গার প্রকৃত মালিক আব্দুর রহিমের কাছ থেকে ১৯৫৩ সালে এই জমি কিনেছিলেন। সেই থেকে তারাই এর মালিক।

তিনি বলেন, আমরা ২ বোন, ১ ভাই। ১৯৯০ সালে পিতার মৃত্যুর পর থেকে গত ৩৫ বছর ধরে সম্পত্তি দেখাশোনা করছেন তিনি নিজে। সেখানে ২০০০ সালের একটি মার্কেট নির্মাণ করেন তিনি। পিতা আফরোজ বক্সের নামে এর নামকরণ করা হয় ‘আফরোজ ম্যানশন’। মার্কেটে প্রতি মাসে তিনি দোকানদারদের কাছ থেকে ভাড়া উঠান ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা করে।

বিদ্যুৎ বিল দেন তিনি, খাজনাও পরিশোধ করেন নিজের নামে। কিছুদিন পর জাল দলিল নিয়ে এসে মার্কেট এবং তার আশপাশের বিশাল জায়গার মালিকানা দাবি করেন বেলাল এবং তার নিকটাত্মীয়রা।

বিচার-সালিশ এবং মামলাও করেন আদালতে। ২০১৪ সালে বেলালের নিকটাত্মীয় আব্দুল হামিন, মান্নানসহ কয়েকজন মিলে জায়গা থেকে আমাদের উচ্ছেদ চেয়ে মামলা করেন আদালতে। ২০২৩ সালে সিএমএম প্রথম আদালতে আরেকটি মামলা করেন তারা। যে মামলা এখনো বিচারাধীন। ৫ আগস্টের পর বেলাল দলীয় পরিচয়ে আমাদের নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিতে শুরু করেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা আমাকে ধরিয়ে নেওয়া হয়। জোর করে জায়গা তাদের বুঝিয়ে দিতে বলা হয়। আমি তা না করলে তারা ২৮ মার্চ বিকেলে এসে আমার জায়গা জোর করে দখল করেন। সেই থেকে তারা মার্কেটের ভাড়াও তুলছেন। এ নিয়ে আমার মা সুনারা বেগম আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো কাজ হয়নি। দলীয় পরিচয় ও পেশিশক্তির কাছে আমরা পরাজিত হই।

গত ২৪ জুন আমরা মার্কেটে গেলে খবর পেয়ে বেলাল ও তাদের লোকজন এসে আমাদের ওপর হামলা করে। আমরা ভিকটিম হলেও তার ভাই আমাদের ওপরই মামলা দায়ের করেন। তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তির কারণে মামলা করতে পারছি না। বেলাল আমাদের আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছেন। অথচ আমি নিজে বিএনপির রাজনীতি করি।

টিপু জানান, ২৭ মার্চ বেলালের উপস্থিতিতেই বাড়ি থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায় যৌথ বাহিনী। ২৮ মার্চ যখন বিকেলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়, তার আগে বেলাল দলবল নিয়ে মার্কেট দখল করে নিয়েছেন।

গত তিন মাস ধরে দখলে রেখেছেন আমাদের সম্পত্তি। দলীয় ফোরামসহ অনেক জায়গায় আমরা নালিশ দিয়েছি। কোথাও সুবিচার পাইনি। তারা মামলাধীন অবস্থায় দখল করায় আমরা বিষয়টি আদালতকে জানালে, প্রশাসন মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত যেমন ছিল, তেমন থাকতে নির্দেশ দেয়।

কিন্তু সেই নির্দেশও মানেননি বেলাল। নিজের প্রভাব খাটিয়ে গেল ২৪ জুন আবারও আমাদের ওপর হামলা করেন। তাড়িয়ে দেন আমাদের স্থাপনা থেকে।

তিনি জানান, বর্তমানে জমির পর্চা আমার নামে। পাশের ১৬ ডিসিমেলের একটি জায়গা তাদের দাবি করে আদালতে মামলা করলেও আমার পক্ষেই রায় আসে। বাকি সম্পত্তির দাবি নিয়ে তারা আদালতে গিয়েছেন। মামলা নিষ্পত্তির আগেই তারা সেই জায়গা আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছেন।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন বিএনপি নেতা বেলাল আহমদ। হাসপাতাল থেকে তিনি বলেন, ৮৪ ডিসিমেল জায়গার মধ্যে ৫০ ডিসিমেল আমাদের কেনা। যার দলিল রয়েছে আমাদের কাছে। এটিও তারা দখল করে রেখেছিলেন। বাকি ৩৪ ডিসিমেল মৌরসি সম্পত্তি হিসেবে আমরা এর দাবিদার।

এগুলো আমার নানার বাড়ির সম্পত্তি। মা সেই সূত্রেই মালিকানা পেয়েছেন। আমরা দখল করিনি, বরং আমাদের সম্পদ আমরা বুঝে নিয়েছি, যা তারা দীর্ঘদিন জবরদখল করে রেখেছিলেন। যৌথ বাহিনীর হস্তক্ষেপেই তারা আমাদের সেই জায়গা বুঝিয়ে দিয়েছেন। তাদের সামনে তিনবার শুনানি হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিল, ভাড়ানামা ছাড়া আর কোনো প্রমাণই তারা দেখাতে পারেননি। অথচ আমাদের কাছে ছিল জমি কেনার দলিল। তারাই আমাদের ওপর হামলা করেছে। আহত করেছে আমাদের অনেককে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!