সংবাদ প্রচার বন্ধ করে বেরিয়ে না এলে সাংবাদিকদের তালাবদ্ধ করে রাখার হুমকি দিয়েছেন রাজশাহী মহানগর জাতীয় যুবশক্তির দুই নেতা।
পরে বিক্ষুব্ধ সাংবাদিকদের তোপের মুখে তাঁরা দুঃখ প্রকাশ করেন। সোমবার (১ ডিসেম্বর) রাজশাহী পর্যটন মোটেলে বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত নেতারা হলেন- রাজশাহী মহানগর জাতীয় যুবশক্তির যুগ্ম সদস্য সচিব সোয়েব আহমেদ ও একই সংগঠনের মুখ্য সচিব মেহেদি হাসান ফারাবি।
এর মধ্যে সোয়েব আহমেদের বিরুদ্ধে গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। নগরীর আসাম কলোনি এলাকায় দুই নারীকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
সাংবাদিকেরা জানান, গত শনিবার এনসিপির রাজশাহী জেলা আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরদিন রোববার ওই কমিটি থেকে একজন পদত্যাগ করেন।
ওই রাতেই কয়েকজন জুলাই যোদ্ধা সংবাদ সম্মেলন করে নতুন কমিটির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলামকে ‘আওয়ামী দোসর’ আখ্যা দিয়ে তাঁর পদত্যাগ দাবি করেন। এ পরিস্থিতির মধ্যে সোমবার বিকেলে জেলা এনসিপির নতুন কমিটির পরিচিতি সভার আয়োজন করা হয়।
এ নিয়ে আগে থেকেই উত্তেজনা ছিল। খবর পেয়ে বিকেলে সাংবাদিকেরা সভাস্থল রাজশাহী পর্যটন মোটেলে পৌঁছান। সেখানে কমিটির আরও পাঁচজন পদত্যাগের ঘোষণা দেন এবং সাইফুল ইসলামের পদত্যাগ দাবি করেন।
পরে সাংবাদিকেরা জেলা এনসিপির পরিচিতি সভায় প্রবেশ করেন এবং অভিযোগের বিষয়ে সাইফুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। এ সময় কয়েকজন সাংবাদিক সরাসরি সম্প্রচার (লাইভ) করছিলেন।
এ অবস্থায় মেহেদি হাসান ফারাবি ও সোয়েব আহমেদ সভাকক্ষে প্রবেশ করেন। সোয়েব আহমেদ সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘এখনই সাংবাদিকেরা বেরিয়ে যান। তা না হলে সাংবাদিকসহ সবাইকে তালা মেরে দেওয়া হবে।’ এ সময় তিনি আরও কিছু আপত্তিকর কথা বলেন।
তাৎক্ষণিকভাবে সাংবাদিকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানান। পরে সোয়েব আহমেদ দ্রুত মোটেলের সম্মেলনকক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। সাংবাদিকেরাও তাঁর পিছু নেন এবং বাইরে তাঁকে ঘিরে ধরে তাঁর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান।
এতে সেখানে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে। এক পর্যায়ে নিজের বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন সোয়েব আহমেদ।
এর আগে পরিচিতি সভা চলাকালে সোয়েব আহমেদসহ কয়েকজন তরুণ মোটেলের ভেতরে প্রবেশ করে ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ স্লোগান দিতে থাকেন।
তখন মোটেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁদের বোঝান যে, ভেতরে ৫৩ জন অতিথি রয়েছেন এবং এ ধরনের স্লোগানে তাঁরা আতঙ্কিত হতে পারেন। পরে ওই তরুণেরা মোটেলের বাইরে অবস্থান নেন। তবে বাইরে থেকেও তাঁরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
এদিকে আওয়ামী সম্পৃক্ততার অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলা এনসিপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার কোনো আওয়ামী সম্পৃক্ততা নেই। বরং আমি আগে জিয়া পরিষদের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। পরে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হই।’
অন্যদিকে সাংবাদিকদের তালাবদ্ধ করে রাখার হুমকির বিষয়ে এনসিপির মহানগর শাখার আহ্বায়ক মোবাশ্বের আলী বলেন, ‘ছেলেটা (সোয়েব আহমেদ) আমাদের সঙ্গে থাকে। তবে এনসিপিতে তার কোনো পদ নেই। সে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা। বয়স কম, আবেগের বশে এমন কথা বলে ফেলেছে।’



