বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


টিমোফে বোর্দাচেভ

প্রকাশিত: জুলাই ২২, ২০২৫, ১১:২২ পিএম

বিশ্লেষণ

পশ্চিমারা পারমাণবিক সমতাকে ভয় পায় কেন?

টিমোফে বোর্দাচেভ

প্রকাশিত: জুলাই ২২, ২০২৫, ১১:২২ পিএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তারের প্রশ্নটি আর কাল্পনিক নয়। এটি ঘটছে। এখন একটাই প্রশ্ন, এই প্রক্রিয়া কত দ্রুত এগোবে! অদূর ভবিষ্যতে আমরা বর্তমানের নয়টি দেশের পরিবর্তে ১৫টি পারমাণবিক শক্তিধর দেখতে পাব। তবে এই পরিবর্তন আন্তর্জাতিক রাজনীতিকে মৌলিকভাবে পাল্টে দেবে বা বিশ্বব্যাপী বিপর্যয় ডেকে আনবে এমন আশঙ্কার সুনির্দিষ্ট কারণ এখনও নেই।

পারমাণবিক অস্ত্রের আবিষ্কার ছিল প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, যা বৈশ্বিক বিষয়গুলোকে নতুন রূপ দিয়েছে। অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে পারমাণবিক অস্ত্রই সবচেয়ে বেশি রাষ্ট্রগুলোর সামরিক ক্ষমতার স্তর নির্ধারণ করে দিয়েছে। এটি এমন এক ধরনের হুমকি তৈরি করেছে, যেটি কোনো দেশই উপেক্ষা করতে পারে না।

পারমাণবিক অস্ত্রের সবচেয়ে গভীর প্রভাব সম্ভবত এই যে, এটি এমন রাষ্ট্র গড়ে তুলেছে যেগুলো কার্যত বাইরের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অনাক্রম্য। ইতিহাসে এমনটা আগে কখনও দেখা যায়নি। একটি রাষ্ট্র যতই শক্তিশালী হোক না কেন, আগে প্রতিদ্বন্দ্বীদের সম্মিলিত শক্তি তাকে পরাজিত করতে পারত। অতীতে বড় বড় সাম্রাজ্যও আক্রমণের ঝুঁকিতে ছিল। রাশিয়াসহ আলোকিত যুগের রাজতন্ত্রগুলো ক্ষমতার ভারসাম্যের ওপর নির্ভর করত, যেখানে একক কোনো রাষ্ট্র অন্যদের পুরোপুরি আধিপত্যে নিতে পারত না।

কিন্তু পারমাণবিক অস্ত্রের আবির্ভাব সেই ভারসাম্যকে পাল্টে দিয়েছে। আজ রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের হাতে এত ভয়াবহ ধ্বংসাত্মক শক্তি আছে যে, কোনো শক্তিই তাদেরকে সত্যিকার অর্থে হুমকি দিতে পারে না, এমনকি কোনো জোটও নয়। চীনও ধীরে ধীরে এই একচেটিয়া অবস্থানে পৌঁছাচ্ছে, যদিও তাদের অস্ত্রভান্ডার এখনো মস্কো বা ওয়াশিংটনের তুলনায় অনেক ছোট।

পারমাণবিক ভয় দেখিয়ে আমেরিকার স্বার্থ হাসিলের দিন শেষ। ছবি- সংগৃহীত

এদিক থেকে পারমাণবিক অস্ত্র এক ধরনের অদ্ভুত শান্তি এনেছে আস্থার ওপর নয়, বরং ভয়ের ভিত্তিতে। পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে যুদ্ধ শুধু অকল্পনীয়ই নয়, রাজনৈতিকভাবেও অর্থহীন। তবে পারমাণবিক পরাশক্তি হয়ে ওঠা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। বিশাল সম্পদের অধিকারী চীন পর্যন্ত সম্প্রতি রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রভান্ডারের কাছাকাছি পৌঁছাতে শুরু করেছে। এত বড় পরিসরের সক্ষমতা অর্জন খুব কম দেশের পক্ষেই সম্ভব।

তবে আশার কথা হলো, অধিকাংশ দেশের এমন ক্ষমতার প্রয়োজনও নেই। ভারত, পাকিস্তান, ব্রাজিল, ইরান, জাপানের মতো বড় আঞ্চলিক শক্তি কিংবা ‘ইসরায়েল’র মতো ছোট রাষ্ট্রও বৈশ্বিক সামরিক অজেয়তা চায় না। তাদের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা, যদি থাকে তা মূলত আঞ্চলিক প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকে ভীত করা, গোটা মহাদেশ দখল নয়। তাদের সীমিত অস্ত্রভান্ডার বিশ্বব্যবস্থার ভারসাম্য নষ্ট করে না।

এমনকি তাদের তা করার প্রয়োজনও পড়ে না। দীর্ঘদিন ধরেই পশ্চিমা কৌশলবিদ এবং রুশ বিশ্লেষকরা যুক্তি দিয়ে আসছেন, সীমিত পরিসরে পারমাণবিক বিস্তার আসলে আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাড়াতে পারে। তাদের যুক্তি খুব সরল, পারমাণবিক অস্ত্র যুদ্ধের খরচ অনেক বাড়িয়ে দেয়। যখন আগ্রাসনের মূল্য হতে পারে পুরো জাতির ধ্বংস, তখন দেশগুলো অনেক বেশি সতর্ক হয়ে ওঠে।

ইতোমধ্যেই আমরা এর বাস্তব উদাহরণও দেখতে পাচ্ছি। খুব সীমিত অস্ত্রভান্ডার থাকা সত্ত্বেও উত্তর কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে লেনদেনে অনেক সাহসী অবস্থান নিতে পারছে। অন্যদিকে, ইরান দীর্ঘদিন পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে দ্বিধায় ছিল, যার সুযোগ নিয়ে ২০২৫ সালের জুনে ‘ইসরায়েল’ ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে দেশটিতে হামলা চালায়। এই ঘটনা একটি স্পষ্ট বার্তা দেয় বর্তমান বিশ্বে, পারমাণবিক ক্ষমতাবিহীন রাষ্ট্রগুলো অনেক বেশি ঝুঁকির মুখে।

এই বাস্তবতা আজকের পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ ব্যবস্থার দুর্বলতা স্পষ্ট করে তুলেছে। ভারত, পাকিস্তান, ‘ইসরায়েল’ ও উত্তর কোরিয়া সব দেশই এই নিয়ম লঙ্ঘন করেছে, কিন্তু কোনো দেশই বড় ধরনের শাস্তির মুখোমুখি হয়নি। অন্যদিকে, ইরান নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করেছিল, আর তাতেই চড়া মূল্য দিতে হয়েছে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে অন্য দেশগুলো বিষয়টি দেখছে এবং নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ান এই দেশগুলোও হয়তো ভবিষ্যতে স্বাধীনভাবে অথবা যুক্তরাষ্ট্রের নীরব সমর্থনে, পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের পথে হাঁটতে পারে। ওয়াশিংটন ইতোমধ্যেই দেখিয়েছে তাদের পূর্ব এশীয় মিত্রদের দীর্ঘমেয়াদী পরিণতি নিয়ে খুব বেশি মাথাব্যথা নেই। চীনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে তারা পারমাণবিক অস্থিতিশীলতার ঝুঁকিও নিতে প্রস্তুত।

বিশ্বের নিয়ন্ত্রণ হারানোর ভয়ে তটস্থ পশ্চিমারা। ছবি- সংগৃহীত

এই প্রেক্ষাপটে, নতুন পারমাণবিক শক্তির উত্থান কেবল সম্ভাব্য নয় বরং প্রায় অনিবার্য। তবে এর মানে এই নয় যে পৃথিবী ধ্বংসের পথে এগোচ্ছে।

কেন? কারণ নতুন পারমাণবিক রাষ্ট্রগুলো বাড়লেও প্রকৃত ক্ষমতার ভারসাম্য অনেকাংশেই অক্ষুণ্ন থাকে। কোনো উদীয়মান দেশ শিগগিরই রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরাশক্তির স্তরে পৌঁছাতে পারবে না। অধিকাংশ দেশই সীমিত মাত্রার প্রতিরোধ সক্ষমতা গড়ে তুলবে, যা নিজেকে রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট হলেও বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি নয়। এই অস্ত্রাগার হয়তো প্রতিপক্ষকে বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারবে, কিন্তু মানবজাতিকে ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে না।

ভারত ও পাকিস্তান, ইরান ও ‘ইসরায়েল’ অথবা অন্যদের মধ্যে আঞ্চলিক যুদ্ধ হলে তা হবে এক ট্র্যাজেডি। লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে। কিন্তু এই বিপর্যয় ভৌগোলিকভাবে সীমিত হবে। এগুলো পৃথিবী ধ্বংসের পরিস্থিতি নয়। এবং এই ধরনের পরিস্থিতিতে পারমাণবিক পরাশক্তি রাশিয়া এবং আমেরিকা সম্ভবত উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগে শান্তি চাপিয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করবে।

অবশ্যই, এটাই কোনো ইউটোপিয়া নয়। তবে এটি পশ্চিমা যুদ্ধবাজদের কল্পিত সর্বনাশও নয়, যেটা তারা প্রায়ই ভবিষ্যদ্বাণী করে থাকে। বরং সত্যি বলতে, যেটাকে সবাই সবচেয়ে ভয়াবহ বলে মনে করে—যেমন রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সরাসরি পারমাণবিক সংঘর্ষ তার তুলনায় এই বহুমেরু পারমাণবিক বিশ্ব হয়তো তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতিকর।

পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার অবশ্যই দুঃখজনক হতে পারে। এটি কূটনৈতিক সম্পর্ককে জটিল করে তুলতে পারে। কিন্তু এটিকে পাগলামি বলা যাবে না। বরং এটি বর্তমান ব্যবস্থার প্রতি সার্বভৌম দেশগুলোর একটি যৌক্তিক ও বাস্তব প্রতিক্রিয়া। কারণ এ ব্যবস্থায় কেবলমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলোই নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে সক্ষম। কয়েকটি দেশের হাতে থাকা একচেটিয়া ক্ষমতা এখন ভাঙছে। এটি কোনো ব্যর্থতা নয়, বরং গোটা ব্যবস্থার স্বাভাবিক পরিণতি।

পারমাণবিক অস্ত্রের বিপুল মজুদ কি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য হুমকি। ছবি- সংগৃহীত

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বিশ্বব্যবস্থার কৌশলগত কাঠামো একধরনের কল্পনাপ্রসূত ধারণার ওপর দাঁড়িয়েছিল, যেখানে ধরেই নেওয়া হয়েছিল, পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার বন্ধ থাকবে এবং পশ্চিমারা অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। কিন্তু এখন সেই কল্পনা ভেঙে পড়ছে। দেশগুলো বুঝতে পারছে যে শুধু চুক্তি করলেই হবে না, কার্যকর না হলে তা হবে মূল্যহীন এবং নিরাপত্তা কখনোই অন্যের ওপর ছেড়ে দেওয়া যায় না।

দীর্ঘমেয়াদে, এই বাস্তবতা মোকাবিলায় একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন হবে। হয়তো ১৫টি পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র বিশ্ব আদর্শ নয়, কিন্তু এটি সঠিক নেতৃত্ব থাকলে পরিচালনাযোগ্য। যদি প্রধান শক্তিগুলো সংযম ও দায়িত্বশীলতা বজায় রাখে, তবে এই বিশ্বকে স্থিতিশীল রাখা সম্ভব। রাশিয়া প্রাচীন পারমাণবিক শক্তিগুলোর মধ্যে একটি, মস্কো এই ভারসাম্যের গুরুত্ব বোঝে এবং সহজে তা নষ্ট করবে না।

কিন্তু বিপদ হতে পারে পশ্চিমাদের দিক থেকে। তাদের অহংকার, স্বল্পমেয়াদি কৌশলগত লাভের হিসাব এবং যেকোনো মূল্যে আধিপত্য ধরে রাখার মানসিকতা একটি এমন সংকট তৈরি করতে পারে, যা তারা নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। পূর্ব এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বেপরোয়া কৌশল, মিত্রদের নিরাপত্তা নিয়ে তাদের উদাসীনতা এবং একচেটিয়া প্রভাব বজায় রাখার দৃঢ় সংকল্প এই প্রবণতাই সবচেয়ে বড় হুমকি।

আমরা এক নতুন পারমাণবিক যুগে প্রবেশ করছি যেটা হবে আরও ভিড়াক্রান্ত, আরও জটিল এবং আরও ভঙ্গুর। কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে না, যদি ক্ষমতাধর দেশগুলো ক্রসেডারের মতো আচরণ না করে বরং দায়িত্বশীল রক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।

 

লেখক: শিক্ষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ভালদাই ডিসকাশন ক্লাবের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর

Shera Lather
Link copied!